নানা ছলে তথ্য সংগ্রহ করতেন ডাকাত সদস্যরা

ধরা পড়েছে আন্তজেলা ডাকাত দলের ১০সদস্য। তারা একেকটি ডাকাতির পরিকল্পনা করতেন এক দেড় মাস সময় নিয়ে, খুব ঠান্ডা মাথায়। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়,গাজীপুর, ২৪ নভেম্বর। ছবি: আল-আমিন
ধরা পড়েছে আন্তজেলা ডাকাত দলের ১০সদস্য। তারা একেকটি ডাকাতির পরিকল্পনা করতেন এক দেড় মাস সময় নিয়ে, খুব ঠান্ডা মাথায়। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়,গাজীপুর, ২৪ নভেম্বর। ছবি: আল-আমিন

ছয় জেলার তিন ডাকাত দল। প্রতি দলের সরদার একজন। আবার সব দলের সরদার একজন। তাঁর কথা মতো ক্রেতা সেজে সোনার দোকানে যেতেন এক সদস্য। সোনা কেনার ছলে জানতেন খুঁটিনাটি। সে অনুযায়ী ডাকাতির পরিকল্পনা সাজানো হতো। এরপর সুযোগ বুঝে করতেন ভয়ানক ডাকাতি। একেকটি ডাকাতির পরিকল্পনা হতো এক দেড় মাস সময় নিয়ে, খুব ঠান্ডা মাথায়।

গত ১৫ নভেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজারের দুটি সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় আন্তজেলা ডাকাত দলের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার হয়। এ ঘটনায় আজ রোববার সকালে জেলা পুলিশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তারা।

গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত দলের সদস্যরা হলেন মনির মোল্লা (৩৮) ও তাঁর স্ত্রী ছুম্মা খাতুন (৩২), আলমগীর হোসেন (৪০), মো. রানু শেখ (৩৮), মো. সাইদুর সরদার (৪৪), বাদশা প্রামাণিক (৩৮), নাজমুল (২৬), সঞ্জয় সরকার (৪০) বিবেক পাল (৪২) ও মো. সুজন (২৪)।

এর মধ্যে মনির মোল্লা, তাঁর স্ত্রী ছুম্মা খাতুন ও আলমগীর হোসেনের বাড়ি পাবনা জেলায়, বাদশা প্রামাণিকের বাড়ি বগুড়ায়। এই তিনজন মিলে একটি ডাকাত দল। সাইদুর, রামু শেখ ও নাজমুল মিলে আরেকটি ডাকাত দল। তাঁদের মধ্যে সাইদুরের বাড়ি মাদারীপুর, রামু শেখের বাড়ি রাজবাড়ী ও নাজমুলের বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। আর সুজন ও তাঁর সহযোগীদের নিয়ে তৃতীয় ডাকাত দল। তবে তাঁর সহযোগীরা এখনো ধরা পড়েনি। সুজনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়। বাকি সঞ্জয় সরকার ও বিবেক পাল স্বর্ণ দোকানি। এর মধ্যে সঞ্জয় সরকারের দোকান আশুলিয়া ও বিবেক পালের দোকান ধামরাই এলাকায়। তাঁদের একজন অর্থ ও একজন পরিকল্পনা দিয়ে সহযোগিতা করতেন। তিন দলেরই মূল সরদার মনির মোল্লা। তাঁরা এক হয়ে ঢাকা ও তার আশপাশের জেলায় ডাকাতি করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সামসুন্নাহার জানান, গত ১৫ই নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গাজীপুরের শ্রীপুরের জৈনাবাজারের গফুর সুপার মার্কেটে নিউ দিপা জুয়েলার্স ও লক্ষ্মী জুয়েলার্স নামক দুটি সোনার দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়। ডাকাত দল প্রথমে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও চাপাতির মুখে ৮০ ভরি স্বর্ণালংকার, ৫০০ ভরি রুপা ও নগদ চার লাখ ৬৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাত দলের গুলিতে গুরুতর আহত হয় দিপা জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী দেবেন্দ্র কর্মকার। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা হয়। গত ২২ ও ২৩ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান ডাকাতির সঙ্গে জড়িত দশজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় লুণ্ঠিত ৪৩ ভরি সোনা, ২ কেজি ৬শ গ্রাম রুপা ও ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩ শত ২০ টাকা। এ ছাড়াও জব্দ করা হয় ডাকাতিতে ব্যবহৃত ৭টি ককটেল,১টি চাপাতি ও ১টি মোটরসাইকেল।

পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তাঁরা বিভিন্ন সময় ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও আশপাশের অন্যান্য জেলায় ডাকাতি করতেন। এর মধ্যে সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরের জৈনা বাজারে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করেন তারা। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার ৩ থেকে ৪ দিন আগে সোনার দোকান দুটির একটি থেকে নাকফুল কেনেন ছুম্মা খাতুন। এরপর নাকফুলটি বদলানোর ছলে কয়েকবার দোকানে যান তিনি। এ সময় বিভিন্ন ছলে দোকানে থাকা সিটি টিভি ক্যামেরা, মালামাল, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয় তথ্য সংগ্রহ করে দলের সদস্যদের বলেন। এরপর তাঁর তথ্য অনুযায়ী ডাকাতির পরিকল্পনা করেন বিবেক পাল। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও মাইক্রোবাস ভাড়াসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি কিনতে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন সঞ্জয় পাল। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে পরিকল্পনামাফিক ১৫ই নভেম্বর সন্ধ্যায় দোকানটিতে ডাকাতি করেন তারা। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ পুরো এলাকায় ভীতির সৃষ্টি হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ জানান, তারা খুব ঠান্ডা মাথার ডাকাতচক্র। একেকটি ডাকাতির পরিকল্পনা করতে সময় নেন এক থেকে দেড় মাস। তা ছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বেশে সোনার দোকানের তথ্য নিয়ে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। এ ছাড়া তারা বিকাশ এজেন্ট, ব্যাংক গ্রাহক ও গার্মেন্টস কর্মীদের বেতনের টাকা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। এদের একেকজনের বিরুদ্ধে ডাকাতি, খুন, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।