দ্বার খুলতেই লোকারণ্য

ফটক খোলা পেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে এলাকার লোকজন। গতকাল বাসাবোয়। প্রথম আলো
ফটক খোলা পেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে এলাকার লোকজন। গতকাল বাসাবোয়। প্রথম আলো

সংস্কারকাজের জন্য রাজধানীর বাসাবোর একমাত্র খেলার মাঠটি বন্ধ ছিল দেড় বছর ধরে। গতকাল রোববার বিকেলে মাঠটির দ্বার খোলে ক্ষণিকের জন্য। মুহূর্তেই গোটা মাঠ ভরে ওঠে এলাকার শিশু–কিশোর ও বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে। যেন বন্দিজীবন থেকে মুক্তির আনন্দ! অগুনতি কণ্ঠের কলরবে মুখর হয়ে ওঠে পরিবেশ। খেলাধুলা, হাঁটাহাঁটি ও আড্ডায় মেতে ওঠেন নানা বয়সী মানুষ। এই ঘিঞ্জি নগরীতে একটি খোলা মাঠের জন্য বাসিন্দাদের কতটা আকুতি, তা গতকাল আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠল বাসাবো ও আশপাশের এলাকার মানুষের এই সরব উপস্থিতিতে।

বাসাবোর এই মাঠটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘বাসাবো মাঠ’ নামেই পরিচিত। আগামীকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই মাঠ উদ্বোধন করা হবে। নতুন নাম হবে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আলাউদ্দিন পার্ক’। প্রায় ৮৭ কাঠা আয়তনের এই মাঠের উন্নয়নে খরচ হয়েছে সাড়ে ৬ কোটি টাকার বেশি। মাঠটিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা বারমুডা প্রজাতির ঘাস লাগানো হয়েছে। সংস্কারের পর এতে থাকছে ভেতরে ও বাইরের হাঁটাপথ। এ ছাড়া থাকছে ক্যানটিন, গ্যালারি ও শৌচাগার। ক্রিকেট–চর্চার জন্য আছে নেটে অনুশীলনের ব্যবস্থা।

গতকাল বেলা তিনটায় মাঠের মূল ফটকটি খুলে দেওয়া হয়। তখন অসংখ্য শিশু ব্যাট ও বল হাতে মাঠে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করে। তরুণের দল মাঠে প্রবেশের পর সেলফি তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের ভবনগুলো থেকে বাসিন্দারা মাঠে প্রবেশ করতে থাকেন। এমনকি মাঠ খোলার খবর পেয়ে মাদারটেক, গোড়ান ও শিপাহীবাগের অনেকেও ছুটে আসেন। 

মাঠের পাশেই এক বাসায় থাকেন ইমরান প্লাবন। তিনি বলেন, সবুজ ঘাসে মোড়ানো মাঠটি দৃষ্টিনন্দন হয়েছে। মাঠ ঘিরে আশপাশের পরিবেশও বদলেছে। দীর্ঘদিন ঘরে বন্দী থাকা লোকজন সুযোগ পেয়েই মাঠে চলে এসেছেন। 

প্রায় আড়াই ঘণ্টায় উন্মুক্ত মাঠটিতে এলাকার গৃহিণীরা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে মাঠে এসেছেন। কেউ কেউ সন্তানদের সঙ্গে ফুটবলও খেলেছেন। সন্তানদের উন্মুক্ত মাঠে ছেড়ে দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন তাঁরা। প্রবীণেরাও এসেছেন তাঁদের নাতি-নাতনিকে নিয়ে। একসঙ্গে খেলেছেন ব্যাডমিন্টন, ফুটবল ও ক্রিকেট। ঘুড়ি উড়িয়েছেন অনেকে। মাদারটেক এলাকার বাসিন্দা মৌমিতা সরকার তাঁর দুই বছরের সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে মাঠে এসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোটা এলাকায় উন্মুক্ত কোনো মাঠ নেই। সব সময় বাচ্চাকে নিয়ে বাসায় বন্দী অবস্থায় থাকি। মাঠ খুলে দেওয়া হয়েছে শুনে বেড়াতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। মাঠের এই পরিবেশ ধরে রাখতে হবে।’ 

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মাঠ থেকে সবাইকে বের হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান মাঠ সংস্কারকাজে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা। কিন্তু উৎসুক জনতা মাঠ ছাড়তে নারাজ। অগত্যা ডাকা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। তাঁদের সহযোগিতায় পুরো মাঠ ফাঁকা করতে হয়েছে।