বিদেশেও যাচ্ছে পাবনার শুঁটকি

গ্রামের বাজার থেকে কিনে আনা মাছের শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত দুই ব্যবসায়ী। এই শুঁটকি রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে। গত শুক্রবার পাবনার সুজানগরের পৌরসভা হাট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
গ্রামের বাজার থেকে কিনে আনা মাছের শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত দুই ব্যবসায়ী। এই শুঁটকি রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে। গত শুক্রবার পাবনার সুজানগরের পৌরসভা হাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

বিশাল গাজনার বিলের উঁচু অংশের পানি অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। সেখানে চলছে চাষাবাদ। তবে নিচু খালগুলোতে এখনো পানি আছে। ধরা পড়ছে শোল, বোয়াল, পুঁটি, খলশে, চেলা, ট্যাংরা, টাকি, বাইমসহ নানা প্রজাতির মাছ। ব্যস্ত জেলেরা মাছ ধরার ফাঁকে ফাঁকে আরেকটি কর্মযজ্ঞের তথ্য দিলেন। সে অনুসারে যেতে হলো উপজেলা শহরের চাতালে। সেখানে বিলের মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করা হচ্ছে। রপ্তানি করা হবে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ের বাজারে।

জেলার চাটমোহর উপজেলার বদনপুর গ্রামের মৎস্যজীবী হেলাল উদ্দিন। নিজে বিল থেকে মাছ না ধরলেও পাইকারিভাবে পুঁটি মাছ কেনেন স্থানীয় জেলেদের কাছে থেকে। এরপর প্রতি মণ শুঁটকি তৈরি করতে তাঁর খরচ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। পরে সেগুলো মানভেদে প্রক্রিয়াজাত করেন। একেক মানের শুঁটকি বিক্রি করেন প্রতি মণ ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায়। হেলাল বলছিলেন, উৎপাদন খরচ বাদ দিয়েও প্রতি মণ শুঁটকি থেকে গড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করেন তিনি।

হেলাল উদ্দিনের মতো তাঁর গ্রামের অনেকেই এখন শুঁটকির ব্যবসা করেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেল, পাবনার বিভিন্ন বিল ও নদ-নদী থেকে প্রতিবছর ৬৯ হাজার ৫৭৪ মেট্রিক টন দেশি মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে তাজা মাছের চাহিদা আছে ৬২ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন। বাকি ৬৮৩ মেট্রিক টন মাছ উদ্বৃত্ত থাকে। উদ্বৃত্ত এ মাছ থেকে তৈরি হয় প্রায় ২০০ মেট্রিক টন শুঁটকি। এর মধ্যে চলনবিল অঞ্চল থেকে পাওয়া যায় প্রায় ১৩০ থেকে ১৩৫ মেট্রিক টন। অন্যদিকে গাজনার বিলসহ অন্যান্য বিল থেকে পাওয়া যায় ৬৫ থেকে ৭০ মেট্রিক টন শুঁটকি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। 

গত শুক্রবার সুজানগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, স্থানীয় লোকজন বিল থেকে মাছ ধরার পর তা বাজারে পাইকারি বিক্রি হয়। এরপর সে মাছ যায় উপজেলা সদরে। সেখানে বিশাল এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি শুঁটকির চাতাল। সুজানগর উপজেলা সদরের মসজিদপাড়া শুঁটকি চাতালের ব্যবসায়ীরা জানান, চাতালে আসার পর মাছগুলোকে শুঁটকিতে পরিণত করা হয়। এরপর সেগুলো ভাগ করা হয় ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরিতে। ‘এ’ মানের শুঁটকি বিক্রি হয় ঢাকার বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। পরে ওই ব্যবসায়ীরা আরেক দফায় প্রক্রিয়াজাত করে আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, দুবাইয়ে রপ্তানি করেন।

অন্যদিকে এ ও বি মানের কিছু শুঁটকি সরাসরি রপ্তানি করা হয় ভারতে। আকার ও মানভেদে শুঁটকির দামেও ভিন্নতা আছে। পুঁটি, খলশে, চেলাসহ ছোট মাছের প্রতি মণ শুঁটকি ৬ থেকে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর বাইম, বোয়ালসহ বড় মাছের প্রতি মণ শুঁটকি বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। 

মসজিদপাড়া শুঁটকি চাতালের ব্যবসায়ী শরিফ কাজী জানান, শুধু সুজানগর থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০ টন শুঁটকি দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া চলনবিল অঞ্চল থেকে গড়ে প্রতি সপ্তাহে আরও ২০ থেকে ২৫ টন শুঁটকির উৎপাদন হয়। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে পাবনার শুঁটকির সুনাম আছে। তবে বৈদেশিক বাজারে শুঁটকি বিক্রির কোনো নীতিমালা নেই। এখনো ব্যবসায়ীরা বিচ্ছিন্নভাবে রপ্তানি করছেন। শুঁটকি সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও নীতিমালা তৈরি করা গেলে এ খাত থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব।