রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে

>
খিন জ উইন
খিন জ উইন
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে মানবাধিকারকর্মী খিন জ উইন ১০ বছর বন্দী ছিলেন। শুক্রবার ঢাকায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মিয়ানমারে গণহত্যা নিয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ দীপ্ত

প্রথম আলো: রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার কতটা আন্তরিক?
খিন জ উইন: মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মোটেও আগ্রহী নয়। মিয়ানমার সরকার বলছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে। এর আগে তারা রোহিঙ্গাদের প্রথমে ভেরিফিকেশন কার্ড দেবে, তারপর ছয় মাস অপেক্ষার পর ফিরিয়ে নেবে। এদিকে রোহিঙ্গারা বলছে, নিরাপত্তা, পূর্ণ নাগরিকত্ব ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার আগে তারা ফিরবে না। 

প্রথম আলো: শান, কাচিন ও আরাকান অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন এবং বাড়িছাড়া করা মিয়ানমারের জন্য কতটুকু উপকারে আসবে?
খিন জ উইন: মিয়ানমারে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ৭০ বছর ধরে হয়ে আসছে। এটা মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠদের নীতির একটা অংশ। সংখ্যালঘুরা চাইছে স্বায়ত্তশাসন। এদিকে মিয়ানমার কেন্দ্রীয় সরকারের অস্বীকার ও অনিচ্ছাতেই রোহিঙ্গাদের ওপর এমনটা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ‘ইনডিজিনাস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না মিয়ানমার। অথচ তারা হাজার বছর ধরে এখানে বাস করছে। রোহিঙ্গারা অবশ্য নিজেদের মিয়ানমারের নাগরিক মনে করে। 

প্রথম আলো: ২০১৬ সালের আগে রোহিঙ্গা তরুণেরা মিয়ানমারে চাকরি করতেন, পার্লামেন্টের সদস্য হতেন। রোহিঙ্গা তরুণেরা বর্তমানে নেতৃত্বে আসতে পারছেন না কেন?
খিন জ উইন: মিয়ানমারে এই অবস্থা ২০১০ সালে নির্বাচনের পর থেকে শুরু হয়েছে। এটা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব মনে হতে পারে। কিন্তু তখন থেকেই আন্তধর্মগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে আরাকানের মুসলিমদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়।

প্রথম আলো: আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলায় অং সান সু চি মিয়ানমারের পক্ষে লড়বেন বলে খবরে এসেছে। সু চির অবস্থান সম্পর্কে আপনার মত কী?
খিন জ উইন: এটা খুবই বেমানান ও হাস্যকর সিদ্ধান্ত। আইসিজের ওই আদালতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের সাক্ষী ও বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। মিয়ানমারের কেউ সেখানে গিয়ে পক্ষ নিলে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। আগামী বছর নির্বাচন হবে। তাই সু চি হয়তো এমন অবস্থান নিচ্ছেন, যাতে মিয়ানমারের মানুষ ভাবে সু চি তাঁদের পক্ষে আছেন। 

প্রথম আলো: রোহিঙ্গারা কী বিচার পাবে বলে আপনার মনে হয়?
খিন জ উইন: বিষয়টা এটা এত সহজ নয়। আমাদের সবাইকে এই বিষয়ে আরও সোচ্চার হতে হবে। প্রথমে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে হবে। সেখানে নাগরিকদের সম্পূর্ণ অধিকার ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আছে। এর মধ্যে বয়সে ১৮ বছরের নিচে প্রায় ৫ লাখ। এসব রোহিঙ্গা শিশুর ভবিষ্যৎ কীভাবে দেখেন?
খিন জ উইন: রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ অনেক দায়িত্বশীল ও উদার মনের পরিচয় দিয়েছে। বাংলাদেশ যা করেছে অন্য কেউ তা করতে চাইবে না। আন্তর্জাতিক দাতা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে মিয়ানমার বিশ্বাস করে না। কোনো সংস্থাকেই সেখানে কাজ করতে দেওয়া হয় না। মিয়ানমারে গিয়ে রোহিঙ্গারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করবে—সে পরিস্থিতি বা পরিবেশ সেখানে নেই। এদের শিক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশ চাইলে কিছু করতে পারে। তবে সেটা অনেক বড় দায়িত্ব চেপে বসবে বাংলাদেশের ওপর। এটা করা অনেক কঠিন। একটা রাষ্ট্র আর কত চাপ নেবে?