১ ডিসেম্বর থেকে উত্তরবঙ্গে পেট্রলপাম্পে ধর্মঘট

বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো ।
বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো ।

তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধি, পেট্রলপাম্প-সংলগ্ন জমির মাশুল কমানোসহ ১৫ দফা দাবিতে উত্তরবঙ্গের সব পেট্রলপাম্পে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব এবং পেট্রলপাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।

মিজানুর রহমান বলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ১৫ দফা দাবি না মানা হলে আগামী ১ ডিসেম্বর ভোর ছয়টা থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব পেট্রলপাম্পে ধর্মঘট পালন করা হবে। ধর্মঘট পালনের সময় জ্বালানি তেল ডিপো থেকে উত্তোলন, পরিবহন এবং বিপণন বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ১৫ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেল বিক্রয়ের প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের কমিশন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নাকি পরিবেশক পরিশোধ করবেন সেটা সুনির্দিষ্ট করা, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরির শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দুর্ঘটনা বিমা প্রদানের নীতিমালা প্রণয়ন করা, ট্যাংকলরির ভাড়া বৃদ্ধি করা, পেট্রলপাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ প্রথা বাতিল করা, পেট্রলপাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ প্রথা বাতিল করা, পেট্রলপাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল করা, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রলপাম্প–সংলগ্ন মহাসড়কের পাশের জমি ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল করা, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ব্যতীত অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক লাইসেন্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতার নিয়ম বাতিল করা, বিএসটিআই কর্তৃক ভূগর্ভস্থ তেল মজুতের ট্যাংক ৫ বছর পরপর বাধ্যতামূলক ক্যালিব্রেশনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ব্যতীত সরকারি অন্যান্য দাপ্তরিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ডিলার/এজেন্টদের অযথা হয়রানি বন্ধ করা, নতুন পেট্রলপাম্প স্থাপনের ক্ষেত্রে পেট্রলপাম্পের মালিক সংগঠনের ছাড়পত্রের বিধান চালু করা, পেট্রলপাম্পের পাশে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তি সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং সড়ক মহাসড়ক থেকে ট্যাংকলরি থেকে জোরপূর্বক পৌরসভার চাঁদা আদায় বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্ধারিত পেট্রলপাম্প-সংলগ্ন জমির শতাংশপ্রতি ভাড়া শহরের জন্য ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ও গ্রামের জন্য ৪০০ থেকে ৯০০ টাকা ছিল। এখন এই ভাড়া বাড়িয়ে শতাংশপ্রতি লক্ষাধিক টাকা করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রামে শতাংশপ্রতি ৪০০ টাকার পরিবর্তে দুই লক্ষাধিক টাকা পরিশোধ করতে হবে। পেট্রলপাম্পের সামনে মহাসড়কসংলগ্ন জায়গা ভাড়ার প্রথা বাতিল করতে হবে।

ঐক্য পরিষদের নেতারা আরও বলেন, অনেক স্থানে ট্যাংকলরি টার্মিনাল নেই, সেখানে টার্মিনাল স্থাপন ও বিদ্যমান টার্মিনালগুলোর সংস্কার করতে হবে। প্রতিটি ডিপোয় পরীক্ষাগার স্থাপন, পাঁচ লাখ টাকার দুর্ঘটনা বিমা চালু ও ট্যাংকলরির ভাড়া বাড়াতে হবে।

অতীতে এসব দাবি ও সংস্কার নিয়ে সরকারের জ্বালানিমন্ত্রীসহ নানা দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দাবি আদায়ে আশ্বস্তও করা হয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও দাবি পূরণ হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এম এ মোমিন, বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এ আর এম খোরশেদ আলম, বিশেষ প্রতিনিধি এ বি এম সিদ্দিক, উত্তরবঙ্গ ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের বাঘাবাড়ি ঘাট শাখার সভাপতি আজিজুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজমত মোল্লা, পেট্রলপাম্প মালিক আবদুর করিম, জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।