রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কারাগারে

যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নূর ইসলামের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর জেলা জজ ও জ্যেষ্ঠ বিশেষ আদালতের বিচারক বেগম রাশেদা সুলতানা এ আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ কে এম হারুন উর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রংপুরে মামলাটি করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক ফেরদৌস রহমান। মামলাটি যখন হয়েছে, তখন তিনি অধ্যক্ষ ছিলেন। এরপর অতি সম্প্রতি তিনি অবসরে যান। এ মামলায় আজ জামিন নিতে গেলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে নূর ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় আসামি ছয়জন। তাঁরা হলেন রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. নূর ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক সারোয়াত হোসেন, বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকার, তাঁর বাবা ও মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আবদুস সাত্তার সরকার, ছেলে আহসান হাবীব এবং ভগ্নিপতি ও ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের মালিক আসাদুর রহমান।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রংপুর মেডিকেল কলেজে ভারী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিম্নমানের ব্যবহারের অনুপযোগী যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে সরকারের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড আদারস ইন্সট্রুমেন্ট, কেমিক্যাল অ্যান্ড রিএজেন্ট (এমএসআর) ও কম্পিউটার অ্যান্ড আদারস ইন্সট্রুমেন্ট ক্রয়ের লক্ষ্যে গঠিত সাত সদস্যবিশিষ্ট দরপত্র কমিটির সভাপতি ছিলেন রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (বর্তমানে সাবেক) নূর ইসলাম ও সদস্যসচিব ছিলেন সহকারী অধ্যাপক সারোয়াত হোসেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, রংপুর মেডিকেল কলেজে যথাযথ টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই অধ্যক্ষ নূর ইসলাম বিভিন্ন মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের জন্য গত বছর ৫ মে দরপত্র আহ্বান করেন। আর এই দরপত্র বিজ্ঞপ্তি গত বছর ৬ মে রংপুরের একটি স্থানীয় ও জাতীয় একটি ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। ২০১৮ সালের ২১ জুন দরপত্র মূল্যায়ন করে অধ্যক্ষ নূর ইসলাম একই তারিখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড দেন এবং চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। ২৩ জুন কার্যাদেশ দেন।

কার্যাদেশে যেসব যন্ত্রাংশ সরবরাহ করার কথা, তা হলো একটি ইলেকট্রো লাইটস অ্যানালাইজার, একটি বায়োলজিক্যাল মাইক্রোসকপ, একটি শর্টওয়েভ মেশিন ফর ফিজিওথেরাপি, একটি আলট্রাসাউন্ড মেশিন ফর ফিজিওথেরাপি, একটি ভিডিও এনড্রোসকপি, তিনটি ডায়াথারমি মেশিন, ৩২টি এয়ারকন্ডিশনার, একটি অটোমেটেড ইমুনোয়াসে অ্যানালাইজার এবং পাঁচটি সেমিঅটো বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার।

মামলা সূত্রে জানা যায়, কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির কার্যাদেশ অনুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি বিভিন্ন দেশের লেভেল লাগিয়ে গত বছর ২৭ জুন চালানের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় এবং ওই দিনই তা অধ্যক্ষ নূর ইসলাম পাস করেন। প্রশাসনিক মঞ্জুরি পাওয়ার আগেই জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠিয়ে দেন। সরকারের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেন।

মামলায় আরও উল্লেখ রয়েছে, রংপুর মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সারোয়াত হোসেন একাই বাজারদর কমিটি, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এবং সার্ভে কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ননক্লিনিক্যাল কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে ইকুইপমেন্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকলেও চারটি কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকারকে ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেছেন।

দরপত্রের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রংপুর মেডিকেল কলেজের দরপত্র কমিটির বিরুদ্ধে তদন্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

উল্লেখ্য, চলতি বছর ২০ জুন ‘রংপুর মেডিকেল কলেজ, সরঞ্জাম কেনাকাটায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়।