চাঁদাবাজদের মদদে হকাররা ফুটপাতে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও স্বল্প আয়ের হকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নগরীতে হলিডে মার্কেট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল; কিন্তু সিটি করপোরেশনের উদাসীনতা ও চাঁদাবাজদের দাপটে এ উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রায়ই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও বেশির ভাগ ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। অভিযানের পরপরই সেখানে ফের বসে পড়ছেন হকাররা।

২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল একনেক সভায় হকারদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে উপযুক্ত স্থানে হলিডে মার্কেট চালু করার কথা বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাজধানীর পাঁচটি স্থানে ছুটির দিন হাকরদের পণ্যের পসরা বসানোর উদ্যোগ নেয়। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন শুধু নারীদের জন্য মহাখালী টার্মিনালের পাশে হলিডে মার্কেট বসানোর উদ্যোগ নেয়। তবে এটি কিছুদিন পরে বন্ধ হয়ে গেছে।

এরপর ২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রকাশিত ডিএসসিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে, বায়তুল মোকাররম লিংক রোড, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, নবাবপুর রোড ও সেগুনবাগিচা—এই পাঁচটি এলাকায় হলিডে বাজার বসানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়। প্রতি শুক্র-শনিবার ও সরকারি ছুটির দিন সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এসব মার্কেট চালু থাকবে বলেও জানানো হয়। শর্ত ছিল, নির্ধারিত স্থান ও দিনে ব্যবসা করার পর ব্যবসায়ীদের নিজ দায়িত্বে মালামাল সরিয়ে নিতে হবে। তাঁদের নির্ধারিত দাগের মধ্যে বসতে হবে। কোনো স্থায়ী বা অস্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করা যাবে না।

হকারদের একাংশের ভাষ্য, করপোরেশনের এ সিদ্ধান্তের পর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে এবং বায়তুল মোকাররম লিংক রোডে হলিডে মার্কেট চালু হয়। এ দুটি এখনো চলছে। তবে বাকি তিনটি হলিডে মার্কেট চালু হয়নি। বাংলাদেশ হকার্স লীগ ও হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফুটপাতে লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজ, পুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে বাকি হলিডে মার্কেটগুলো চালু করা যাচ্ছে না। কারণ, হলিডে মার্কেট চালু হলে ফুটপাত থেকে লাইনম্যান ও পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে।’

জানা গেছে, গুলিস্তান, মতিঝিলসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করা হকাররা হলিডে মার্কেটে যেতে চাচ্ছেন না। তাঁরা বলছেন, গুলিস্তানে বেচাবিক্রি বেশি। সেগুনবাগিচা বা অন্যত্র গেলে তাঁদের বিক্রি কমে যাবে। এ ছাড়া লাইনম্যানরাও হকারদের না যেতে মদদ জোগাচ্ছেন। কারণ, হলিডে মার্কেটে হকাররা চলে গেলে তাঁদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্যই হকাররা গুলিস্তান এলাকা ছাড়াছেন না। ফলে গুলিস্তানে তীব্র যানজট নিরসনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না।

এ অবস্থায় লাইনম্যানদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার পরামর্শ দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দীন মনে করেন, হকারদের হলিডে মার্কেটে যাওয়ার ব্যাপারে বাধ্য করতে হবে। অভিযান চালিয়ে ফুটপাতে হকার বসানোর প্রবণতা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হলেও এর স্থায়ী সমাধান হবে না।

বাংলাদেশ হকার্স লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম বলেন, পথচারীরা ফুটপাত হয়ে স্বচ্ছন্দে চলাচল করুক এটা তাঁরা চান। তবে লাইনম্যানদের চিহ্নিত করে হকারদের হলিডে মার্কেটে বসানোর ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। 

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরীন প্রথম আলোকে বলেন, প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে ফুটপাত দখলকারীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। ফুটপাতে বসার জন্য হকারদের যারা ইন্ধন দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যেকোনো মূল্যে হকারদের ফুটপাত ছাড়াতে হবে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, হলিডে মার্কেটে হকারদের কোনো সমস্যা হলে জানাতে হবে। তাঁরা সমস্যার সমাধান করবেন। হকারদের কল্যাণে সিটি করপোরেশনের যেসব অঙ্গীকার আছে, তা পূরণ করা হবে। হকারদের ফুটপাত ছাড়তে হবে।