হোলি আর্টিজানের দুই কর্মী ঘটনার শিকারমাত্র

সাইফুল চৌকিদার ও  শাওন
সাইফুল চৌকিদার ও শাওন

হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্দেহ ছিল, রেস্তোঁরার মারা যাওয়া দুই কর্মী সাইফুল চৌকিদার ও জাকির হোসেন জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত। দুই বছরের মাথায় তাঁদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে বলা হয়, তাঁরা দুজনই ঘটনার শিকারমাত্র।

সাইফুল ছিলেন হোলি আর্টিজান বেকারির শেফ। আর জাকির ওরফে শাওন ‘কিচেন হেলপার’। ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পরদিন যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর হামলাকারী পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে সাইফুলের লাশও উদ্ধার করা হয়। আর ওই দিন ভোর চারটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে একটি গাড়িতে করে জাকিরকে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ৮ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট দুই বছর তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযোগপত্রে সাইফুল ও জাকিরের বিষয়ে বলা হয়, হোলি আর্টিজানে অভিযান শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছিল যে ঘটনাস্থলে ছয়জন নিহত ও একজন জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু তদন্তকালে দেখা যায়, নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন প্রত্যক্ষ হামলাকারী। আরেকজন হোলি আর্টিজানের কর্মী সাইফুল। তাঁকে ও পরে হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তি জাকিরকে সন্ত্রাসী দলের সদস্য ভেবে সংবাদ ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ হামলাকারী বা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। দুজনই ঘটনার শিকারমাত্র।

হোলি আর্টিজানে হামলার এক বছর পর ২০১৭ সালের ৪ জুলাই হামলায় নিহত দেশ ও বিদেশের ২০ জনের পরিবারকে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। প্রত্যেকের পরিবার পান ১৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করে। কিন্তু সাইফুল বা জাকিরের পরিবার কোনো সহায়তা পায়নি। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ভান্ডারিরপুল এলাকার একটি বস্তিতে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন জাকিরের বাবা আবদুস সাত্তার, মা মাকসুদা বেগম। আবদুস সাত্তার গত সোমবার মুঠোফোনে বলেন, জাকির ছিলেন তাঁর পরিবারের অন্যতম উপার্জনকারী। এখন বড় মেয়ে গার্মেন্টসে কাজ করে যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চলে। আবদুস সাত্তারের দাবি, নির্যাতনে জাকিরের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা কোনো বিচার পাননি। 

তিন সন্তানকে নিয়ে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামে থাকেন সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার। হোলি আর্টিজানে হামলার সময় তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সোনিয়া সেলাইয়ের কাজ করেন। আর হোলি আর্টিজান বেকারির মালিক প্রতি মাসে কিছু টাকা দেন। এটা দিয়েই তাঁদের সংসার চলে।

সোনিয়া বলছিলেন, সাইফুলের লাশের জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। লাশটা পর্যন্ত পাননি। এটাই তাঁদের দুঃখ।