রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিয়ে বাংলাদেশের উপায় ছিল না

‘রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায় বিচার ও জবাবদিহি’ শীর্ষক জনবক্তৃতায় বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক। পাশেই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুর হাসান। ছবি: প্রথম আলো
‘রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায় বিচার ও জবাবদিহি’ শীর্ষক জনবক্তৃতায় বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক। পাশেই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুর হাসান। ছবি: প্রথম আলো

পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেছেন, রাখাইনের মিয়ানমারের সেনাদের নৃশংসতা থেকে প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গারা যখন পালিয়ে আসছিল, তাদের আশ্রয় দেওয়া ছাড়া বাংলাদেশের সামনে কোনো পথ ছিল না। 

আজ বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায় বিচার ও জবাবদিহি’ শীর্ষক জনবক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুর হাসান ওই জনবক্তৃতা অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন।

বক্তৃতা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া, আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের প্রক্রিয়া শুরুর পর মিয়ানমার কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে জানতে চাইলে, শহীদুল হক বলেন, পরিস্থিতিটা খুব জটিল ছিল। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটার জাতীয় এবং আঞ্চলিক প্রভাবের বিষয়টিও আমাদের মাথায় ছিল। পাশাপাশি আমাদের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে হয়েছে। আমাদের সামনে কি আসলেই কোনো বিকল্প ছিল? তাদের আসতে দেওয়া ছাড়া আমাদের সামনে কোনো পথ ছিল না।’

পররাষ্ট্রসচিবের মতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্ত আর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) বিচার প্রক্রিয়া শুরুর ফলে মিয়ানমার গুরুতর চাপের মুখে পড়েছে। এই চাপ সামলে ওঠা তাদের জন্য দুরূহ হবে। বিশ্বব্যাপী তাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হচ্ছে। এই চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার দায় যে মিয়ানমারের জেনারেলরা এড়াতে পারবে না সেই প্রসঙ্গে শহীদুল হক বলেন, দুই বছর আগেই তাদের বলেছি রাখাইনে যা ঘটেছে তা তাদের সারা জীবন তাড়িয়ে ফিরবে।

’৭৮ ও ’৯২ সালে বিপুল সংখ্যায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রসচিব স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ অতীতে কখনোই রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতায় জবাবদিহির বিষয়টিকে সামনে আনেনি। ফলে তাদের ওপর নৃশংসতা চালিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে গেছেন। তাই রোহিঙ্গারা রাখাইনে গিয়ে আবার বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের ভয়াবহ নৃশংসতাকে বিশ্ব সম্প্রদায় গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত জবাবদিহির বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে গড়িয়েছে।

ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করেছে গাম্বিয়া। বাংলাদেশ কেন এ মামলা করল না, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গ টেনে শহীদুল হক বলেন, গত বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করেছিল গাম্বিয়া। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকার বৈঠকে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাসের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে ওআইসির পক্ষে বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে জোটে বিভক্তিও দেখা দিয়েছিল। ওআইসির কোনো কোনো সদস্য দেশের মন্ত্রীরা মিয়ানমারকে আদালতে নেওয়ার বিপক্ষে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে ওআইসির শীর্ষ নেতারা মিয়ানমারকে আদালতে নিতে একমত হয়েছেন। আইসিজেতে মামলার পুরো প্রক্রিয়ার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যখন যেখানে যা যা করার দরকার সবকিছুই করেছে বাংলাদেশ।

মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ উল্লেখ করে সচিব বলেন, তবে এখন তাদের নিজ ঘরে ফেরার সময় এসেছে। আর এই কাজটি হতে হবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে। গত কয়েক যুগ ধরেই রোহিঙ্গা নিধনের কাজ করে চলেছে মিয়ানমার। এই সমস্যা গভীরতর হচ্ছে। এখনই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না করা গেলে সেটা পরের প্রজন্মকেও ভোগাবে।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে সহায়তা করবে।