১০ বছরে দেশে তিন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে

>ইনফ্লুয়েঞ্জা, জীবজন্তুতে থাকা ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া এবং নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি বাড়বে।

আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের মানুষ প্রধানত তিন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে। এ তিন ঝুঁকি হলো ইনফ্লুয়েঞ্জা, জীবজন্তুতে থাকা ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া এবং নিপাহ ভাইরাস।

জনস্বাস্থ্য ও পশুস্বাস্থ্য নিয়ে ‘ওয়ান হেলথ’ শিরোনামে গতকাল বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে এ আশঙ্কার কথা জানান সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান–আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), ইউনিসেফসহ বেশ কয়েকটি দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। গতকাল ছিল সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন।

কেন তিনটি রোগ প্রধান ঝুঁকি হয়ে উঠবে এর কারণ ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, বিশ্বে অধিকাংশ মহামারি হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য দায়ী ভাইরাসের কারণে। ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস অতি দ্রুত চরিত্র পরিবর্তন করে। আবার একাধিক ভাইরাস একীভূত হয়ে (মিউটেশন) নতুন ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটাতে পারে। আর কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যেগুলো জীবজন্তু ও মানুষের জন্য ব্যবহার করা হয়। মানুষ ও জীবজন্তু উভয়ের ক্ষেত্রেই অকার্যকর হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক।

আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক বলেন, বাদুড়ের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। মানুষ থেকে মানুষেও এই ভাইরাস ছড়ায়। নিপাহতে মৃত্যুহার অত্যন্ত বেশি, প্রায় ৭২ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিপাহতে বিশেষ কোনো ভয় নেই। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিপাহ ভাইরাসের পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা করছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, জীবজন্তু ও পশুপাখি থেকে মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আগের চেয়ে বেড়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ হাজার ২০০ মানুষ এবং ৪০০ জীবজন্তু বসবাস করে। জীবজন্তু ও মানুষের অসুখকে তাই আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।

অনুষ্ঠানে পশুসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. আইনুল হক বলেন, খাদ্য ও দৈনন্দিন অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য অনেক বন ও জলাশয় ধ্বংস করা হয়েছে। পাশাপাশি মানুষের যাতায়াত ও জীবজন্তুর স্থানান্তর বেড়েছে। এতে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

উন্নয়নের কথা বলে কখনোই প্রতিবেশ ও পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে অতিথি পাখির সংস্পর্শে আসছে স্থানীয় হাঁস বা দেশি পাখি। এতে দুই দিকেই ঝুঁকি বাড়ছে। এ দেশের হাঁসের কোনো রোগ অতিথি পাখির মাধ্যমে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়াতে পারে। আবার অতিথি পাখির রোগে আক্রান্ত হতে পারে এ দেশের পাখি।

পশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে, এমন বক্তব্য অনুষ্ঠানের আলোচনায় উঠে আসে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরাসরি জীবজন্তু ও পশুপাখির কিছু রোগে এখন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে আছে অ্যানথ্রাক্স, জিকা, নিপাহ, ওয়েস্ট নিল ভাইরাস, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, মার্স করোনারি ভাইরাস। বন, উপকূল, জলাভূমি রক্ষা করলে জীবজন্তু ও পশুপাখির আবাস রক্ষা পাবে। মানুষ সরাসরি পশুপাখির সংস্পর্শে না এলে অনেক সংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমবে। এটাই ওয়ান হেলথের মূল কথা।