পার্বত্য অঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎসহ চার প্রকল্প উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। ঢাকা, ২৮ নভেম্বর। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। ঢাকা, ২৮ নভেম্বর। ছবি: পিআইডি

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ স্থাপনা, বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার, ভ্রাম্যমাণ গবেষণা তরি ও শিপিং করপোরেশনের পাঁচটি নতুন জাহাজসহ চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রকল্প উদ্বোধন করেন।

উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব প্রকল্প দেশের জনগণের; বিশেষ করে প্রকল্প আওতাধীন স্থানীয় জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্পগুলো হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে সৌরবিদ্যুৎ-সুবিধার ব্যবস্থা, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, কালিয়াকৈর, গাজীপুরে নির্মিত ‘ফোর টায়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার’, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কাপ্তাই লেকে নির্মিত ভ্রাম্যমাণ গবেষণা তরি (রিসার্চ ভেসেল) এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের পাঁচটি নতুন জাহাজ উদ্বোধন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম একসময় অশান্ত ছিল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে তাঁর সরকার এ সমস্যার সমাধান করেছে এবং একসময়ের অন্ধকার পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন বিদ্যুতের আলো ছড়াচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে এই বাংলাদেশ উন্নত দেশ হতো। স্বাধীনতার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্ত পরিবেশ ছিল। কিন্তু ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ’৯৬ সালে তাঁরা ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান এবং এর কারণ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটা রাজনৈতিক। কাজেই রাজনৈতিক পথেই তাঁর সরকার এটি সমাধানের উদ্যোগ নেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরে এসেছে। সেখানকার ১ হাজার ৮০০ অস্ত্রধারী আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের আমরা পুনর্বাসন করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। এখন সেখানে উন্নয়নের ঢেউ উঠেছে। সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে সেখানে রাত-দিন কাজ হচ্ছে। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হচ্ছে।

ঢাকার বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিচ্ছিন্ন এলাকা বলে গ্রিড লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব না। এ কারণে আমরা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলোকিত করেছি।’

এ সময় ‘মুজিব বর্ষ’ উদ্‌যাপনকালে সারা দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের একটি ঘরও অন্ধকার থাকবে না। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলবে। কাজের গতি বাড়বে, সময় বাড়বে। বিদ্যুতের আলোয় কাজ হবে। ’

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গণভবনের শীর্ষ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য দিক এবং পৃথক ভিডিওচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করেন।

প্রধানমন্ত্রী চারটি প্রকল্পকে কেন্দ্র করে প্রকল্প এলাকার প্রশাসন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সাংসদসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।