কয়লা চুরির আসামি কেন বিইআরসির সদস্য, প্রশ্ন উঠল গণশুনানিতে
২৩০ কোটি টাকার কয়লা চুরি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য আবদুল আজিজ খান। তাঁকে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানিতে বিচারকের আসনে রাখায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের গণশুনানিতে প্রশ্ন উঠেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের গণশুনানি। শুনানি চলার সময় বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলামের কাছে এমন প্রশ্ন রাখেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দেশের চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলাকালে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি কমিশনের সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত না করাটা ঠিক হয়নি। এর ফলে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির গোটা প্রক্রিয়ার সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিদ্যুতের মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম এবং কমিশনের অপর চার সদস্য রহমান মুর্শেদ মিজানুর রহমান, মাহমুদউল হক ভূঁইয়া ও আবদুল আজিজ খান শুনানি করছেন। এর মধ্যে আবদুল আজিজ খান বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে ২৩০ কোটি টাকা কয়লা চুরির মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের প্রশ্নের জবাবে মনোয়ার ইসলাম বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এটা আদালতের বিষয়, সেখানে এর সমাধান হবে।
এর জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ মহা দুর্নীতিগ্রস্ত। অভিযুক্ত, বিতর্কিত ব্যক্তিরা কমিশনের সদস্য। তাঁদের পাশে বসিয়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির এই গণশুনানি যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হলো, তেমনি কমিশনও প্রশ্নবিদ্ধ হলো।
একই প্রসঙ্গে সাংবাদিক সেরাজুল ইসলাম বলেন, দেশের আইনে চার্জশিটভুক্ত একজন আসামি জামিনে থাকলেও কি তিনি সরকারি কোনো পদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন?
তবে এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে গণশুনানির প্রথম অধিবেশন শেষ করার ঘোষণা দেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। এ সময় আবদুল আজিজ খান মাথা নিচু করে ছিলেন। শুনানির পুরোটা সময় তিনি কোনো কথা বলেননি।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির চার্জশিট আদালত গ্রহণ করার সময় থেকে তিনি আর চাকরিরত থাকতে পারেন না। মামলা চলাকালীন ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার বিধান রয়েছে। তবে বড়পুকুরিয়ার ২৩০ কোটি টাকার কয়লা চুরির ঘটনায় দুদকের দেওয়া চার্জশিটের পরও বিইআরসির সদস্য আবদুল আজিজ খানকে সাময়িক বরখাস্ত না করায় কমিশনের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শুনানিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা।
২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা খোয়া যাওয়ার কথা স্বীকার করে বিসিএমসিএল। খোয়া যাওয়া কয়লার মূল্য প্রায় ২৩০ কোটি টাকা। তখন বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এই কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করত বিসিএমসিএল।
এদিকে পিডিবি তাদের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে পাইকারি পর্যায় ইউনিট প্রতি ১ টাকা ১১ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলেছে, বিদ্যুতের দাম না বাড়ালে পিডিবির পাইকারি পর্যায় ইউনিট প্রতি ৯৩ পয়সা ঘাটতি থাকবে। গত ১০ বছরে সরকার মোট আটবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।
পিডিবির পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক কাউছার আমির আলী শুনানিতে অংশ নেন। এ ছাড়াও শুনানিতে অংশ নেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।
বৃহস্পতিবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ওপর গণশুনানির প্রথম দিন সকালে পিডিবির পাইকারি পর্যায়ের বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ওপর গণশুনানি হয়। আর দিনের শেষ ভাগে পিজিসিবির সঞ্চালন মাশুল বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। আগামী রোববার থেকে গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হবে। শুনানি শেষ হবে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। শুনানি শেষে ৯০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বিইআরসি আদেশ দেবে।
এদিকে গণশুনানি চলাকালে টিসিবি ভবনের বাইরে গণসংহতি বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সংগঠনটির নেতা–কর্মীরা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানান।