বুয়েটের ৯ ছাত্রকে হল থেকে আজীবন বহিষ্কার

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)

র‍্যাগিংয়ে জড়িত থাকায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আহসানউল্লাহ ও সোহরাওয়ার্দী আবাসিক হলের ৯ ছাত্রকে হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রম ৪ থেকে ৭ টার্ম পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া আহসানউল্লাহ হলের চার ছাত্রকে সতর্ক করা হয়েছে আর সোহরাওয়ার্দী হলের ১৭ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বুয়েটের উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক এবং বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনের সদস্যসচিব মিজানুর রহমান।

গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ ঘটনার পর থেকে বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছেন শিক্ষার্থীরা। আবরার হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের একপর্যায়ে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরতে প্রশাসনকে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি পূরণের শর্ত দেন। সেই তিন শর্তের দ্বিতীয়টি ছিল বুয়েটের আহসানউল্লাহ, সোহরাওয়ার্দী ও তিতুমীর হলে আগে ঘটে যাওয়া র‍্যাগিংয়ের ঘটনাগুলোতে জড়িতদের বিচার ও শাস্তি।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আহসানউল্লাহ ও সোহরাওয়ার্দী হলের র‍্যাগিংয়ের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন তাঁরা হাতে পেয়েছেন। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই দুই হলে র‍্যাগিংয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিতুমীর হলের র‍্যাগিংয়ের ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী রোববার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিবেদন জমা দিলে ওই হলের র‍্যাগিংয়ের ঘটনায়ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মিজানুর রহমান জানান, গতকাল বুধবার বুয়েটের উপাচার্য সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ২৮ ডিসেম্বর থেকে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দিতে তাঁরা প্রস্তুত আছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী কাজের ক্ষেত্রে বুয়েট প্রশাসনের কোনো গাফিলতি নেই উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু তাঁদেরই জীবন থেকে সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাই শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, দ্রুতই তাঁরা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে আসবেন।’

শিক্ষার্থীদের তৃতীয় দাবিটি ছিল, সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি ও র‍্যাগিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে শাস্তির নীতিমালা প্রণয়ন করে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন করে বুয়েটের অধ্যাদেশে সংযোজন। এ বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই নীতিমালার খসড়া প্রকাশ করা হবে।

জানতে চাইলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা আগামী সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের পরবর্তী অবস্থান জানাবেন।

যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো:

র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলের ছয় শিক্ষার্থীকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিভিন্ন মেয়াদে (৪ থেকে ৭ টার্ম) বহিষ্কার ও হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সব্যসাচী দাস, সৌমিত্র লাহিড়ী, প্লাবন চৌধুরী, নাহিদ আহমেদ, অর্ণব চৌধুরী ও ফরহাদ হোসেন।

এ ছাড়া এই হলের চার শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মো. তাসনিম ফারহান, লোকমান হোসেন, শাফকাত বিন জাফর ও তানজির রশিদ আবির।

একই অভিযোগে সোহরাওয়ার্দী হলের তিন শিক্ষার্থীকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিভিন্ন মেয়াদে (৪ থেকে ৭ টার্ম) বহিষ্কার ও হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করেছে বুয়েট প্রশাসন। তাঁরা হলেন মো. মোবাশ্বের হোসেন, এ এস এম মাহাদী হাসান ও আকিব হাসান রাফিন।

এ ছাড়া এই হলের ১৭ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন কাজী গোলাম কিবরিয়া, সাকিব হাসান, মো. সাজ্জাদুর রহমান, সাকিব শাহরিয়া, শেখ আসিফুর রহমান, মো. রাইয়ান তাহসিন, মেহেদী হাসান, তৈয়ব হোসেন, এ এফ এম মাহফুজুল কবির, মো. বখতিয়ার মাহবুব, সৈয়দ শাহরিয়ার আলম, মো. তৌফিক হাসান, মো. কুতুবুজ্জামান, মোহাম্মদ তাহমিদুল ইসলাম, ফেরদৌস হাসান, মো. আল-আমিন ও তাহাজিবুল ইসলাম।