বছরজুড়ে দেশে-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান যৌথভাবে উদ্‌যাপন করবে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো এবং বাংলাদেশ। জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বনেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

২০২০ সালের ১৭ মার্চ শুরু হয়ে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপিত হবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের নানা প্রান্তে বছরজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী বছরের ১৭ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী
উদ্‌যাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের নেতাসহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, ইউনেসকোর সাবেক মহাসচিব ইরিনা বুকোভা ও আরব লিগের সাবেক মহাসচিব আমর মুসা অংশ নিতে পারেন।

আমন্ত্রণের তালিকায় থাকা আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতের কংগ্রেস পার্টির সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতা ও ভারতের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী এল কে আদভানি, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের মার্চে শুরু হয়ে পরের বছরের মার্চ পর্যন্ত অনেকগুলো অনুষ্ঠান হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় বছরজুড়ে পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আগামী মার্চ থেকে প্রতিবছর বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হবে।

বঙ্গবন্ধুর নামে আগামী বছর থেকে একটি পুরস্কার প্রবর্তন করতে যাচ্ছে ইউনেসকো। গবেষণা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশে তরুণদের উৎসাহিত করতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ওই পুরস্কারের জন্য ইউনেসকোকে অর্থ দেবে বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো।

বছরজুড়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বিকেলে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। ওই অনুষ্ঠানে একাধিক বিশ্বনেতা উপস্থিত থাকবেন।

তিনি জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সংগীতসহ বাঙালি সংস্কৃতির প্রতিফলন থাকবে। তুলে ধরা হবে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কাজের দৃশ্যকল্প। বিশ্বনন্দিত একজন শিল্পীকেও অনুষ্ঠানে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার হাতে ‘শ্রদ্ধা স্মারক’ তুলে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করবেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে বিশ্বের নানা প্রান্তে সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। নিউইয়র্ক, লন্ডন, দিল্লি, কলকাতা, বার্লিন, টোকিওসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সম্মেলন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য, ১২টি তথ্যচিত্র এবং একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীকারাগারের রোজনামচা দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপে প্রকাশের জন্য খুব শিগগির একটি খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি প্রকাশনা সংস্থাকে বঙ্গবন্ধুর জীবনী প্রকাশের কাজ দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের একটি সংকলন বের করবে আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে গতকাল সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেসকোর ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইউনেসকোর সাধারণ পরিষদের সভাপতি আলতে চেঙ্গিজারের সভাপতিত্বে এবং ইউনেসকো মহাপরিচালক অদ্রে আজুলে এবং বিভিন্ন কমিটি ও কমিশনের চেয়ারপারসনদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত প্লেনারি সেশনে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিতে পাস হয়।

গত ২৫ নভেম্বর ইউনেসকোর ওই অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউনেসকোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী ইমতিয়াজ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অধিবেশনে যোগ দেওয়া জ্যেষ্ঠ সচিব মো. সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবনাটি দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়েছে। এটা জাতির পিতার প্রতি বিশেষ সম্মান। এর মাধ্যমে মুজিব বর্ষ উদ্‌যাপনকালে দেশজুড়ে নানা কর্মসূচি পালনের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন আরও ব্যাপক পরিসরে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হলো।