ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো: পুলিশের তিন সদস্য ও সোর্স রিমান্ডে

গ্রেপ্তার এএসআই রিয়াজুল, গ্রেপ্তার কনস্টেবল গোপাল সাহা, গ্রেপ্তার কনস্টেবল রাসেলুজ্জামান, গ্রেপ্তার পুলিশের সোর্স হাসান মিয়া, পলাতক কনস্টেবল আবদুল হালিম, পলাতক কনস্টেবল তোজাম্মেল হক। ছবির সত্যতা নিশ্চিত করেছে সখীপুর থানা-পুলিশ
গ্রেপ্তার এএসআই রিয়াজুল, গ্রেপ্তার কনস্টেবল গোপাল সাহা, গ্রেপ্তার কনস্টেবল রাসেলুজ্জামান, গ্রেপ্তার পুলিশের সোর্স হাসান মিয়া, পলাতক কনস্টেবল আবদুল হালিম, পলাতক কনস্টেবল তোজাম্মেল হক। ছবির সত্যতা নিশ্চিত করেছে সখীপুর থানা-পুলিশ

টাঙ্গাইলের সখীপুরে পকেটে ইয়াবা দিয়ে দিনমজুরকে আটক চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিন পুলিশ সদস্য ও তাঁদের সোর্সের বিরুদ্ধে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন আরও অভিযোগ আসছে।

আজ শুক্রবার বিকেলে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল আলম এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এই চারজনসহ পলাতক আরও তিনজনের নামে সখীপুর থানার উপপরিদর্শক (এস আই) আইনুল ইসলাম মামলা করেন।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন, মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গুলরা গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম, কনস্টেবল কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ঢুলদিয়া গ্রামের গোপাল সাহা ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার মোজাটি গ্রামের রাসেলুজ্জামান এবং তাঁদের সোর্স মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল নয়াপাড়া গ্রামের হাসান মিয়া।
পলাতক তিনজন হলেন, ওই পুলিশ ফাঁড়ির দুই কনস্টেবল আবদুল হালিম ও তোজাম্মেল হক এবং আরেক সোর্স সখীপুরের রাজাবাড়ী গ্রামের আল আমিন। এই তিনজন ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে তাঁরা সেখান থেকে সটকে পড়েন।

এএসআই রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও কয়েকজন ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলেছে। এর মধ্যে অন্তত তিন ব্যক্তি গতকাল সখীপুর থানার পরিদর্শক এএইচএম লুৎফুল কবিরের নিকট মৌখিক অভিযোগ করেন। পুলিশ বলছে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব অভিযোগও সামনে আনা হবে।

সখীপুর থানার পরিদর্শক এএইচএম লুৎফুল কবিরের নিকট গতকাল ঘটনাস্থলে অভিযোগ করেছেন এমন তিনজনের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কথা বলা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে সখীপুরের হতেয়া মৌলানাপাড়া এলাকার সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মোখলেছুর রহমান বলেন, গত ২২ নভেম্বর একটি সিগারেটের প্যাকেটে ৫টি ইয়াবা বড়ি ঢুকিয়ে সিএনজিরে পেছনে রেখে দেন এএসআই রিয়াজুল। পরে তিনি সিএনজিতে ইয়াবা রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে তাঁর থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।

মোখলেছুরের মতো পুলিশের কাছে একই অভিযোগ করেন আরেক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক ভাওড়াচালা এলাকার নিয়ামুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, একই দিন (২২ নভেম্বর) একই কায়দার তাঁর থেকেও ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়।

কাঠমিস্ত্রি হলুদিয়াচালা গ্রামের বিপুল সূত্রধরের অভিযোগ, গত ২০ নভেম্বর এএসআই রিয়াজুল তাঁর পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ৩১ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এদিকে আজ মির্জাপুর উপজেলার হাঁটুভাঙা এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার একই কায়দায় এএসআই রিয়াজুল তাঁর সহযোগীদের নিয়ে মির্জাপুর উপজেলার টান পলাশতলী গ্রামের বাছেদ মিয়ার ছেলে আনোয়ারের নিকট থেকে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য,গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সাদা পোশাকে থাকা পাঁচ পুলিশ সদস্য ও দুই সোর্স রাজাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় আসেন। তাঁরা এলাকার দিনমজুর মো. বজলুর রহমানের (২৬) পকেটে ইয়াবা বড়ি ঢুকিয়ে দেন। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁকে জোর করে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তোলেন। বজলুরের চিৎকারে আশপাশের লোকজন অটোরিকশাটি আটক করে। বজলুরের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে উপস্থিত লোকজন পুলিশ ও সোর্সদের তল্লাশি করে কিছু ইয়াবা পান। এতে জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ ও সোর্সদের পিটুনি দিয়ে একটি দোকানে আটকে রাখেন। পরে তাঁরা সখীপুর থানা-পুলিশে খবর দেন। এ সময় আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকা তিনজন (হালিম, তোজাম্মেল ও আলামিন) পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে আটক থাকা চারজনকে সোপর্দ করা হয়। এই চারজনকে প্রথমে মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ফাঁড়িতে এবং পরে সখীপুর থানায় নেওয়া হয়। রাতে সেখানে ওই মামলা হয়।

সখীপুর থানার উপপরিদর্শক (এস আই) ফয়সাল আহমেদ জানান, গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে বিকেলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সখীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এএইচএম লুৎফুল কবির বলেন, তাঁদের কাছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মোখলেছুর রহমান, নিয়ামুল ইসলাম ও কাঠমিস্ত্রি বিপুল সূত্রধর এএসআই রিয়াজুলের বিরুদ্ধে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর মৌখিক অভিযোগ করেছেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এ অভিযোগগুলোও সামনে আনা হবে।

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির হোসেন বলেন, অভিযুক্ত তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনায় অভিযুক্ত অন্য তিনজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, গ্রেপ্তাররা অপরাধী হিসেবে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তাঁরা পুলিশের কোনো দায়িত্ব পালনে যাননি। এ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।