স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে ইউএনও দেখলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী নেই , বিভাগীয় মামলা

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় ১০১ নম্বর চরপাকুন্দিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর দেখা পাননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগের কথা শুনে গত সোমবার সকালে ইউএনও মো. নাহিদ হাসান আকস্মিক ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্য কোনো শিক্ষকের দেখা পাননি। বিদ্যালয়ে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউই তখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে আসেনি। এমনকি সকাল নয়টা থেকে স্কুল শুরুর পর অ্যাসেম্বলিতে প্রথম শিফটে প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অন্তত ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি গিয়ে কোনো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর দেখা পাননি।

ইউএনও মো. নাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই বিদ্যালয় নিয়ে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ ছিল। শিক্ষকেরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীরাও যায় না। প্রধান শিক্ষকও নাকি দু-তিন মাস পরপর এক দিন গিয়ে বিদ্যালয়ে স্বাক্ষর করে আসেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান, কোনো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নেই। তিনি বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা ও বেতন-ভাতা স্থগিতসহ সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান শিক্ষকসহ চার সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। তিনি তাঁর ক্ষমতাবলে চারজন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছেন। যেহেতু প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার তাঁর এখতিয়ার নেই, তাই প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় উপপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। সুব্রত কুমার আরও বলেন, এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর সত্যতাও মিলেছে। ফলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে এ থেকে অন্যরাও শিক্ষা পায়।

১০১ নম্বর চরপাকুন্দিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এটা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

সকাল নয়টা থেকে বিদ্যালয় শুরুর কথা থাকলেও তিনিসহ কেন অন্য শিক্ষকেরা ১০টা বেজে গেলেও বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেননি—এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। আমিনুল হক বলেন, তাঁর অনেক বয়স হয়েছে। চাকরির বয়সও ৩১ বছর হয়ে গেছে। প্রায়ই তাঁর শরীর খারাপ থাকায় বিদ্যালয়ে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়।