রোদে ধুলা, বৃষ্টিতে কাদা-পানি

ইট-সুরকি খসে পড়ায় সড়কটি এখন বেহাল। দিন দিন জনদুর্ভোগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার রায়পুরার হাঁটুভাঙ্গা এলাকায়। প্রথম আলো
ইট-সুরকি খসে পড়ায় সড়কটি এখন বেহাল। দিন দিন জনদুর্ভোগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার রায়পুরার হাঁটুভাঙ্গা এলাকায়। প্রথম আলো

রাসেল মিয়া নরসিংদী-রায়পুরা সড়কে টানা ছয় বছর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। এক বছর ধরে তিনি সড়কটিতে নিয়মিত নন। এখন তিনি সুবিধা বুঝে রায়পুরার অন্য সড়কে যান নিয়ে বের হন।

অবস্থান পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে রাসেল বলেন, নরসিংদী-রায়পুরা সড়কটির স্থানে স্থানে পলেস্তারা উঠে গিয়ে গর্ত হয়ে আছে। কোথাও সড়কের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। এ অবস্থায় সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা খানাখন্দের কারণে পুরো সড়ক ধুলাময় হয়ে থাকে। এ কারণে সড়কটি দিয়ে যাত্রী পরিবহনে সাহস হারিয়েছেন তিনি।

রাসেল একই জেলার বেলাব উপজেলার বারৈচা গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয় ও নরসিংদীর সড়ক ও জনপদ (সওজ) কার্যালয় সূত্র জানায়, ছয় উপজেলার জেলা নরসিংদী। আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা রায়পুরা। রায়পুরার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অবস্থান চরাঞ্চলে। আট বছর আগেও উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরে যাওয়ার সরাসরি সড়ক ছিল না। চরাঞ্চলবাসী সরাসরি ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন।

এ রকম বাস্তবতায় জেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের জন্য প্রথমে অনেকে উপজেলা সদরে আসতেন। তারপর উপজেলা সদর থেকে অটোরিকশায় করে বেলাবর বারৈচায় যেতে হতো। উপজেলা সদর থেকে বারৈচার ৩০ মিনিটের পথ। সেখান থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ব্যবহার করে বাস কিংবা অন্য কোনো যানে চেপে জেলা সদরে যেতেন। অর্থাৎ সড়কপথে জেলা সদরে যেতে কয়েক দফা যানবাহন পরিবর্তন করার বিকল্প ছিল না।

রেলপথে রায়পুরার সঙ্গে নরসিংদীর দূরত্ব কম। রায়পুরা সদর লাগোয়া স্টেশন মেথিকান্দা। মেথিকান্দা স্টেশনে বেশির ভাগ ট্রেনের যাত্রাবিরতি নেই। সে কারণে উপজেলাবাসী চাহিদা অনুযায়ী রেলপথের সুবিধা ভোগ করতে পারছেন না। বর্তমানে নদীপথেও অনেক সমস্যা। শুকনো মৌসুমে বহু স্থানে পানি বেশ কমে যায়। সে কারণে এদিক-ওদিক ঘুরে নৌকাকে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। এতে সময় ও ব্যয় দুটিই বাড়ে।

রায়পুরা সদরবাসীর এমন দুর্ভোগের কথা ভেবে ১০ বছর আগে নরসিংদী-রায়পুরা সড়ক নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়। আট বছর আগে এটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ করে সওজ। সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার। প্রস্থ ১৮ ফুট। সড়কটি নির্মিত হওয়ার পর জেলা সদরের সঙ্গে বিকল্প যোগসূত্র তৈরি করে ও প্রধান সড়কে পরিণত হয়। শুধু তা–ই নয়, এ সড়ক ব্যবহার করে রায়পুরাবাসীর মদনগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জ যাতায়াত করার দ্বার উন্মোচিত হয়। একই পথ ব্যবহার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গিয়ে চট্টগ্রামসহ ওই পথের যেকোনো গন্তব্যে সহজে যাতায়াত করা যায়।

বেহাল সড়ক নিয়ে সবচেয়ে বিপাকে আছেন রায়পুরা পৌর মেয়র জামাল মোল্লা। স্থানীয় লোকজন প্রতিকার চেয়ে প্রায়ই তাঁর কাছে নালিশ করেন। জামাল মোল্লা বলেন, সড়কটি নির্মিত হওয়ার পর জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলা সদরের যাতায়াতের দুর্ভোগ কমে যায়। চলাচল নিরাপদ হয় এবং সময় কম ব্যয় হয়। কিন্তু নির্মাণের পর বড় ধরনের সংস্কার না হওয়ায় দিন দিন ব্যবহারে দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রতিকার পেতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সওজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

গত ২৭ নভেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, রায়পুরা রেলক্রসিং এলাকা, মেথিকান্দা স্টেশন এলাকা, খানা বাড়ি, হাসনাবাদ এলাকায় সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, সবচেয়ে নাজুক ছিল হাঁটুভাঙ্গা থেকে নরসিংদীর দিকের তিন কিলোমিটার পথ। খানাখন্দের কারণে গাড়ি খুবই ধীরগতিতে চলে। তবে সওজ কর্তৃপক্ষ ইট–সুরকি দিয়ে হাঁটুভাঙ্গা এলাকাটি সলিং করেছে। ফলে সমস্যা হলেও যানবাহন চলাচল করতে পারছে। আশরামপুর এলাকাতেও সলিং করতে দেখা গেছে।

হাঁটুভাঙ্গা এলাকায় কথা হয় অটোরিকশাচালক সম্রাট মিয়ার সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সড়কটি নিয়ে কথা বলতে চাইলে বেশ বিরক্ত হন তিনি। তাঁর ভাষ্য, সাংবাদিকদের কাছে বলে কী হবে? সড়ক তো আর মেরামত হয়ে যাবে না। অতীতে সাংবাদিকদের কাছে সড়কটি নিয়ে দুঃখের কথা বলে ফল পাওয়া যায়নি।

একপর্যায়ে অটোরিকশাচালক সম্রাট বলেন, সড়কটির সর্বনাশা অবস্থা। রোদ উঠলে ধুলা আর বৃষ্টি এলে জমে যায় পানি। তখন ১০ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে হয় ৩০ মিনিটে। মাঝেমধ্যে অটোরিকশা উল্টেও যায়।

যোগাযোগ করলে নরসিংদীর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার শোনালেন আশার বাণী। কোনো রকম সংস্কার করে সড়কটি ব্যবহার উপযোগী রাখায় তাঁর যুক্তি হলো, সড়কটির এমন দুরবস্থা থাকবে না। গুরুত্বের কথা বিবেচনায় এনে সড়কটি বড় একটি প্রকল্পের অধীনে নেওয়ার প্রস্তাব করা আছে। প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে সড়কটি প্রস্থে ৩০ ফুট হয়ে যাবে। তখন যোগাযোগে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।