ধর্ষণচেষ্টার বিচার চাওয়ায় 'একঘরে' পরিবার, কথা বললে জরিমানা

শিশু ধর্ষণচেষ্টার বিচার চেয়ে মামলা করায় কথিত সমাজপতিদের নির্দেশে ১০ দিন ধরে ‘একঘরে’ হয়ে আছে একটি পরিবার। ওই পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে কথা বললেই তাৎক্ষণিকভাবে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ওই সমাজপতিরা। তাঁদের সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দেখার খবর জানালে আড়াই হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সাহাগোলা ইউনিয়নের একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। একঘরে হয়ে থাকা পরিবারটির অভিযোগ, ওই পরিবারের এক শিশুকন্যাকে একই গ্রামের জগন্নাথ প্রামাণিকের ছেলে স্বপন কুমার (১৯) গত ৩ সেপ্টেম্বর মুঠোফোনে ছবি দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে শিশুটির চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে স্বপন দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ বিষয় নিয়ে ওই দিনই এক গ্রাম্য সালিসের আয়োজন করা হয়। তখন স্বপনকে চড়-থাপ্পড় মেরে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

বিষয়টি আত্রাই থানা-পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পারলে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে স্বপনকে আটক করে থানায় নেয়। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে স্বপনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে তাঁকে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ ।

শিশুটির বাবার অভিযোগ, আসামি স্বপন চন্দ্র প্রায় এক মাস পর জামিনে বের হয়ে আসে। সমাজপতি বা স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে স্বপন গত ২২ নভেম্বর রাতে ওই গ্রামের নিতাই চন্দ্রের বাড়িতে আবার সালিস বসায়। গ্রামের ক্ষিতিশ চন্দ্র, গ্রাম পুলিশ নিরাঞ্জন চন্দ্র ও সুকুমারের নেতৃত্বে এই সালিস চলে। শিশুটির বাবা কেন থানায় মামলা করল—এই অপরাধে সালিসের রায়ে পরিবারটিকে ১০ দিন ধরে সমাজচ্যুত বা একঘরে করে রাখা হয়েছে। এমনকি পরিবারটির ধর্মীয় কার্যকলাপও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমাজের কেউ তাদের সঙ্গে চলাফেরা ও কথাবার্তা বললে উপযুক্ত সাক্ষী প্রমাণ সাপেক্ষে ৫ হাজার টাকা জরিমানার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এমন অবস্থায় পরিবারটি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কেউ পুলিশের কাছেও যেতে পারছে না।

ক্ষিতিশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই পরিবারকে আমরা একঘরে করে রাখিনি। তবে এই সমাজের লোকজন তার সঙ্গে কথা বলবে কি বলবে না, সেটা তাদের ব্যাপার।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কাউকে একঘরে করার বিধান নেই। পরিবারটিকে একঘরে করার বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি সত্য হলে প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

ধর্ষণ চেষ্টার মামলা ও আসামি স্বপনকে আটকের পর জামিনে মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোসলেম উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই পরিবারকে একঘরে করে রাখার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সালিসকারীদের থানায় তলব করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’