ধর্মঘটে তিন বিভাগের সড়কপথ অচল হওয়ার আশঙ্কা

১৫ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু হয়েছে। গতকাল বগুড়ার বাইপাস সড়কের একটি পেট্রলপাম্পে।  ছবি: প্রথম আলো
১৫ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু হয়েছে। গতকাল বগুড়ার বাইপাস সড়কের একটি পেট্রলপাম্পে। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ—এই তিন বিভাগের ২৬ জেলায় কোনো পেট্রলপাম্প গতকাল রোববার খোলেনি। এই তিন বিভাগে বন্ধ ছিল তেল উত্তোলন ও পরিবহনও। বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে চলছে ধর্মঘট। অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের প্রভাব গতকাল খুব বেশি পড়েনি যান চলাচলে। কিন্তু জ্বালানি না পেলে আজ সোমবার থেকে প্রায় অচল হয়ে যেতে পারে তিন বিভাগের সড়কপথ। বিপর্যস্ত হবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা।

১৫ দফা দাবিতে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম তেল বিক্রির কমিশন বৃদ্ধি, ট্যাংকলরি চলাচলে পুলিশি হয়রানি বন্ধ, পেট্রলপাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ প্রথা বাতিল, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ প্রথা বাতিল, পেট্রলপাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট স্থাপন, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল ও পেট্রলপাম্প-সংলগ্ন জমির ইজারা বাতিল।

ধর্মঘটের খবরে গত শনিবার ওই তিন বিভাগের বিভিন্ন জেলার পেট্রলপাম্পগুলোতে তেল কিনতে প্রচুর মানুষ ভিড় জমান। দিন শেষে সংকটে পড়েছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরা। লাগাতার এই ধর্মঘট চলতে থাকলে তিন বিভাগে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে। এতে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনব্যবস্থা ছাড়াও চাষের জমিতে পানি সেচের কাজও ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় পেট্রলপাম্প বন্ধের সুযোগে অতিরিক্ত দামে খোলা তেল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশের মহাসচিব এবং পেট্রলপাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, ১৫ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দাবি না মানায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ধর্মঘট শুরু হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

তবে এ পেট্রলপাম্প ধর্মঘটে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা নেই জানিয়ে বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বাসগুলো ঢাকা থেকে তেল নিয়ে বেশির ভাগ গন্তব্যে গিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসতে পারে। তবে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁওয়ের মতো দু-একটি গন্তব্যে একটা প্রভাব পড়তে পারে।

আর ঠাকুরগাঁওয়ের শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপক আবদুল হামিদ বলেন, তাঁদের বাসগুলো ঢাকা থেকে তেল ভরে যাতায়াত করছে। স্থানীয় বাসগুলো আগে তেল ভরে রেখে গতকাল চলাচল করেছে। তবে রোববার তেল না পেলে সংকট তৈরি হবে।

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে তেল সরবরাহ করা হয় সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপো থেকে। ধর্মঘটের কারণে বাঘাবাড়ীর পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন, বিপণন ও পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বাঘাবাড়ী উত্তরবঙ্গ ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনির সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তেলভর্তি ট্যাংকলরি ডিপো থেকেই চেক করে ছেড়ে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও পুলিশ রাস্তায় রাস্তায় গাড়ি আটকে চাঁদা দাবি করে এবং অবৈধ চাঁদা আদায় করে। পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ ধর্মঘটের অন্যতম দাবি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বাঘাবাড়ী নৌবন্দর থেকে তিনটি তেল কোম্পানির মাধ্যমে প্রতিদিন পেট্রল, অকটেন ও ডিজেল মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখ লিটার তেল উত্তরবঙ্গ যেত। গতকাল একটি লরিও বাঘাবাড়ী ছাড়েনি। ডিপো ছাড়াও গতকাল সিরাজগঞ্জের প্রতিটি পেট্রলপাম্প বন্ধ ছিল।

ধর্মঘটের প্রথম দিন বগুড়ার পেট্রলপাম্পগুলোর প্রবেশপথ কোথাও রশি টাঙিয়ে, কোথাও ড্রাম ও প্লাস্টিকের খুঁটি রেখে বন্ধ করে দেওয়া হয়। রশিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ১৫ দফা দাবিসংবলিত পোস্টার।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কয়েকটি পাম্পে গিয়ে দেখা যায়, মোটরসাইকেল ও বাসের চালকেরা তেল নিতে গেলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে সরকারি গাড়িগুলোতে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে।

বাগেরহাট শহরের খানজাহান আলী ফিলিং স্টেশনের অন্যতম মালিক কাজী মো. বাশার বলেন, ‘সরকার আমাদের দাবি না মানলে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ধর্মঘট চলবে। প্রয়োজনে পাম্প বন্ধ থাকবে। পাম্পের জায়গায় মুদিদোকান করব।’

মেহেরপুরের একটি পাম্পে তেল কিনতে এসে ফিরে যাওয়ার সময় ট্রাকচালক মেহের আলী বলেন, বরিশালে সবজি নিয়ে যাওয়ার চুক্তি ছিল। তেলের অভাবে ট্রাক চালানো যাচ্ছে না। এভাবে পাম্প বন্ধ থাকলে জেলার একটি ট্রাকও ভাড়ায় যেতে পারবে না।