ছাত্রলীগের মারামারি, অবরোধের ডাক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের শিকার পুলিশের একটি গাড়ি। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ক্যাম্পাসের গোলচত্বর এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের শিকার পুলিশের একটি গাড়ি। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ক্যাম্পাসের গোলচত্বর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। গতকাল রোববার দুই নেতাকে মারধরের পরিপ্রেক্ষিতে এ অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। এ সময় ভাঙচুর করা হয় পুলিশ বক্স, প্রক্টরিয়াল বডির একটি ও পুলিশের চারটি গাড়ি।

এ ছাড়া রাত সাড়ে আটটায় বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রাখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।

মারধরের শিকার দুজনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের (সিএফসি) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আর মারধরকারীরা সবাই ভার্সিটি এক্সপ্রেসের (ভিএক্স) অনুসারী। গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় হাটহাজারী উপজেলার এগারো মাইল এলাকায় তাঁদের মারধর করা হয়।

এর আগে গত শুক্রবার মধ্যরাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিএফসি ও ভিএক্সের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের সাত কর্মী আহত হন। সিএফসি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও ভিএক্স সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

পুলিশ ও ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, মারামারির এসব ঘটনা তিন দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমাধান করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনার জেরে গতকাল সাবেক সহসভাপতি সুমন নাছির ও আবদুল্লাহ আল নাহিয়ানকে একা পেয়ে মারধর করে ভিএক্স। বিষয়টি জানাজানি হলে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শাহ আমানত হলের সামনে অবস্থান নেয় সিএফসি। এ সময় হলের সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। পাশাপাশি গোলচত্বরে পুলিশ বক্স, প্রক্টরিয়াল বডির গাড়ি ও পুলিশের চারটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ জলকামান নিক্ষেপ করে তাদের সরিয়ে দেয়। বর্তমানে ক্যাম্পাসে অন্তত এক শ পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

গত বৃহস্পতিবার রাতে শহীদ আবদুর রব হলের টিভি কক্ষে বৈঠক করাকে কেন্দ্র করে সিএফসি ও ভিএক্সের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে গত শুক্রবার রাত ১২টায় আবদুর রব হলের ৩২৯ নম্বর কক্ষে ভিএক্সের পাঁচ কর্মীকে মারধর করেন সিএফসি পক্ষের কিছু নেতা-কর্মী। পরে সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ও কাচের বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে আরও দুই কর্মী আহত হন।

মারামারির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাপস হত্যা মামলার আসামি মিজানুর রহমান ও প্রদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশে এই হামলা চালানো হয়েছে। রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপ দেওয়ায় দুজনই গুরুতর আহত হয়েছেন। তাই আহত অবস্থায় তাঁদের দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর হামলাকারীদের আটক না করা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ চলবে।

তবে এ ঘটনার দায়ভার সভাপতি রেজাউল হককেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন ভিএক্স পক্ষের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কর্মীদের ওপর হামলায় কাউকে আটক করেনি পুলিশ। এতে জুনিয়রদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। ফলে সম্পূর্ণ দায়ভার সভাপতিকেই নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, মারামারির এসব ঘটনায় কর্তৃপক্ষ অনেক ধৈর্য ধরেছে। ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেটা যে–ই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ক্যাম্পাসের অবস্থা স্থিতিশীল নয় বলে জানান সহকারী পুলিশ সুপার (উত্তর) মশিউদ্দোলা রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, মুখোশ পরে গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।