বস্তিতে বাল্যবিবাহ ৮২%

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বস্তিতে বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশি। এক গবেষণার তথ্য বলছে, বস্তির ৮২ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগেই। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মা–বাবারা কিশোরী মেয়েকে বিয়ে দেন আইন না মেনেই। ঢাকার ভাষানটেক ও চট্টগ্রামের শান্তিনগর বস্তিতে থাকা কিশোরী ও অল্প বয়সী নারীদের ওপর এই গবেষণা করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ।

গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। গবেষকেরা বলেছেন, শহরের বস্তিগুলোতে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা নিয়মিত ঘটনা।

গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনের সময় জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন সাবিনা ফায়েজ রশীদ বলেন, বস্তিতে একসঙ্গে অনেক মানুষ বাস করে, তবে তাদের অনেকেই একে অপরের প্রতিবেশী নয়। গ্রামের কিশোরীরা আত্মীয়–পরিজনবেষ্টিত পরিবেশের মধ্যে থাকে। সেই পরিবেশ বস্তিতে নেই বলে সেখানে ঝুঁকি অনেক বেশি।

১৩ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২ হাজার ১৩৬ জন কিশোরী ও অল্প বয়সী নারীর ওপর এই গবেষণা হয়েছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বস্তির বিবাহিত নারীদের গড় বয়স ১৬ বছর।

>

শহরের বস্তিতে দারিদ্র্য ও সহিংসতা বেশি। বস্তির কিশোরীদের নির্যাতনের ঝুঁকি অনেক বেশি।

বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ে এবং ২১ বছরের নিচে কোনো ছেলের বিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে ‘বিশেষ ক্ষেত্রে’, ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ বা ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়ের ‘সর্বোত্তম স্বার্থ’ বিবেচনায় আদালতের নির্দেশে বিয়ে হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। আইনের এই বিধান বাল্যবিবাহ বন্ধ করার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক বলে মনে করে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে বাল্যবিবাহের হারে বাংলাদেশ চতুর্থ। দেশে বাল্যবিবাহের হার ৫৯ শতাংশ। তবে সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে বাল্যবিবাহের হার ছিল ৪৭ শতাংশ।

বস্তির বিবাহিত নারীদের ৩২ শতাংশ গবেষকদের বলেছে, মা–বাবারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তা করতেন। তাই তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। এদের মধ্যে ২০ শতাংশ বলেছে, ভালোবেসে অল্প বয়সে তারা বিয়ে করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বস্তির ৩৮ শতাংশ কিশোরীর বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের এশিয়া অঞ্চলের সুশাসন ও ন্যায়বিচার–বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি বিশেষজ্ঞ নাভস্মরণ সিং বলেন, বাল্যবিবাহ মানবাধিকার লঙ্ঘন, শিশু অধিকার লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক সনদের লঙ্ঘন। অনেক দেশে এটি ফৌজদারি অপরাধ। তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ বাকি জীবনের সব আনন্দ নষ্ট করে দেয়। ব্যক্তিগত জীবন একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়।