পদচারী সেতুতে আকলিমা ও রুবিনার 'স্কুল'

রাজধানীর আজিমপুরের সরকারি মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সামনের পদচারী সেতুটি তেমন একটা ব্যবহৃত হয় না। সেই সেতুর এক কোণে কাপড় বিছিয়ে পড়ছে আকলিমা ও রুবিনা। তারা দুই বান্ধবী। আকলিমার বয়স ১৩ এবং রুবিনার বয়স ১০ বছর। আজ সোমবার কথা হয় আকলিমা ও রুবিনার সঙ্গে। পড়ালেখার প্রতি তাদের দুজনের আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু দুজনের কারওই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।

পদচারী সেতুর এক কোণ বসে পড়ছে রুবিনা (বাঁদিকে) ও আকলিমা। আজিমপুর, ঢাকা, ২ ডিসেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম
পদচারী সেতুর এক কোণ বসে পড়ছে রুবিনা (বাঁদিকে) ও আকলিমা। আজিমপুর, ঢাকা, ২ ডিসেম্বর। ছবি: আবদুস সালাম

আকলিমা জানিয়েছে, তারা প্রতিদিন এই পদচারী সেতুতে পড়তে বসে। তারা এখন মূলত বিভিন্ন ওয়ার্ড বুক ও সাধারণ অঙ্কের বই পড়ছে। খাতায় ছোট ছোট অঙ্ক করারও চেষ্টা করে দুজনে মিলে। পড়ালেখা নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কও হয়।

আকলিমা জানাল, কয়েক দিন আগে আজিমপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের এক শিক্ষার্থী তাদের কয়েকটি বই ও খাতা কিনে দেয়। সেই বইগুলোই পড়ার চেষ্টা করে তারা। আকলিমার বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরায়। কয়েক বছর আগে আকলিমার মা তাকে এবং তার মাদকাসক্ত বাবা আবু কালামকে রেখে চলে যায়। বছর খানেক আগে বাবার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসে আকলিমা।

আকলিমা বলল, ‘আব্বায় কই থাকে না থাকে খবর নাই।’ আকলিমা এখন থাকে রুবিনার মা-বাবার সঙ্গে—আজিমপুরের এই পদচারী সেতুর নিচেই। রুবিনার মা-বাবা আকলিমার বাবা আবু কালামের পরিচিত।

খাতায় কিছু একটা লিখছে আকলিমা, দেখছে রুবিনা। আজিমপুর, ঢাকা, ২ ডিসেম্বর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
খাতায় কিছু একটা লিখছে আকলিমা, দেখছে রুবিনা। আজিমপুর, ঢাকা, ২ ডিসেম্বর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

রুবিনার মায়ের নাম আকলিমা বেগম। তিনি বললেন, ‘মাইয়াডারে (আকলিমা) তো আর ফালাইয়া দিতে পারি না। ওর মা-ও নাই। আমার মাইয়ার সঙ্গে থাকে, তারা বান্ধবী। তাই আমার সঙ্গেই রাখি।’ আকলিমা বেগম অনুরোধ করেন যাতে আকলিমা ও রুবিনার স্কুলের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

আকলিমা বলল, ‘আমার পড়ালেখা করতে ভালো লাগে। সুযোগ পাইলে আমি পড়তে চাই।’ রুবিনাও স্কুলে যেতে চায়। সেও বলল, ‘আমরা দুজনে মিল্লা পড়ি, ভালো লাগে। আমরা প্রতিদিন পড়তে বই (বসি)। স্কুলে যাইতে পারলে আরও ভালো লাগব।