রোহিঙ্গা সংকট: চলতি মাসে ভাসানচর পরিদর্শনে যাবেন জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা

রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ভাসানচর। ছবি: এএফপি
রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ভাসানচর। ছবি: এএফপি

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে চাপ কমাতে তাদের একটি অংশকে সরকার ভাসানচরে সরিয়ে নিতে চাইছে। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নোয়াখালীতে জেগে ওঠা নতুন চরটিতে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের একাংশকে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ভাসানচর কতটা তৈরি, তা দেখতে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধিদলের চলতি মাসেই সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে।

রাজধানীতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ সোমবার দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক এ কথা জানান।

সরকার কক্সবাজারের শিবিরে চাপ কমিয়ে আনতে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এরই মধ্যে সরকার প্রায় ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা খরচ করে রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরকে প্রস্তুত করেছে। অবশ্য জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপটিতে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যদিও রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরানোর প্রক্রিয়া শুরুর পর জাতিসংঘের একাধিক সংস্থার সহায়তা নিয়েছে বাংলাদেশ। এমন এক প্রেক্ষাপটে ভাসানচর রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য কতটা উপযোগী, সেটা দেখতে জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ দলের নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে ভাসানচর যাওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে ওই সফরটি পিছিয়ে যায়।

জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার বিরোধিতা করছে কি না—জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, জাতিসংঘ বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করছে। এ-সংক্রান্ত জাতিসংঘের একটি কারিগরি দলের খুব শিগগির ভাসানচর যাওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিনিধিদলটি সেখানে কিছু বিষয় নিশ্চিত করতে চায়। ওই বিষয়গুলোর সুরাহার পর স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। কাজেই জাতিসংঘ ভাসানচরে পাঠানোর বিরোধিতা করছে—এ কথা ঠিক নয়।

জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল কবে ভাসানচরে যাবে—জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, এ মাসের মধ্যে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মধ্যে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তাদের সফর পিছিয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলার ক্ষেত্রে আইনি পরামর্শক সংস্থার মতামত নেওয়া হয়েছে কি না—জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, রোহিঙ্গারা যে চলে এসে কেন যাচ্ছে না, সেটা দেখতে হবে। পাশাপাশি তাদের ওপর নৃশংসতার জবাবদিহি ও বিচারের বিষয়গুলোও দেখতে হবে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জবাবদিহি ও বিচার নিশ্চিত হলে এরা নিজের দেশে ফিরে যাবে। না হলে বারবারই বাংলাদেশে আসবে। এর সম্ভাব্য মূল কারণ হতে পারে মিয়ানমারের জবাবদিহি আর বিচারের বিষয়টির সুরাহা হয়নি। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টির সুরাহা হয়নি।

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ব্রিফিংয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক। ফরেন সার্ভিস একাডেমি, ঢাকা, ২ ডিসেম্বর। ছবি: রাহীদ এজাজ
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ব্রিফিংয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক। ফরেন সার্ভিস একাডেমি, ঢাকা, ২ ডিসেম্বর। ছবি: রাহীদ এজাজ

শহীদুল হক বলেন, ‘জবাবদিহি ও বিচারের বিষয়ে আমাদের যে অবস্থান, সেটা আইসিসিতে হোক আর আইসিজেতে হোক, ঠিক ওটারই প্রতিফলন। আইসিজেতে গাম্বিয়ার যে মামলা, ওটা ওআইসির পক্ষ থেকে করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আইসিসি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে আদালতে বিষয়টি তুলেছে। এ বিষয়ে আইসিসি আমাদের মতামত চেয়েছিল। তাদের অনুরোধে আমরা মতামত দিয়েছি। আইসিসি যাতে এখানে কাজ করতে পারে, সে জন্য তাদের সঙ্গে আমাদের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। কাজেই এ প্রক্রিয়াগুলোতে আমরা নানাভাবে জড়িত। আন্তর্জাতিকভাবে কোনো আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মতামত নেওয়া হয়েছে কি না—এ প্রসঙ্গে বলতে পারি, এ বিষয়ে বাংলাদেশের যা যা করার আমরা সবই করেছি।’

আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলায় অং সান সু চি তাঁর দেশের পক্ষে আদালতে কথা বলবেন। ওই আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে কে কথা বলবেন—জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলাটা করেছে গাম্বিয়া। সুতরাং আদালতে বিষয়টির মোকাবিলা করবেন গাম্বিয়ার প্রতিনিধি। গাম্বিয়া থেকে কে যাচ্ছেন, সেটা যেকোনো কিছুর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের আদালতে বক্তব্য রাখার কোনো সুযোগ নেই।’

রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করছে। মিয়ানমার যখন দেখবে আইসিজেতে বিষয়টি গড়াচ্ছে, তখন কি দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়া ঝুলে যাবে? এ প্রশ্নের উত্তরে শহীদুল হক বলেন, ‘আমাদের নীতি হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয়। ২০১৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি তুলেছেন। সুতরাং মিয়ানমার তখন থেকেই জানে আমরা দুই দিক থেকেই বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করছি। একটা আরেকটার পরিপূরক।’

বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন চায়, নাকি বিচার চায়—জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, প্রত্যাবাসন ও বিচার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এর আগেও প্রত্যাবাসন হয়েছে। তারা গেছে এবং আবার এসেছে। তাদের প্রত্যাবর্তন যেন টেকসই হয়, আর ফিরে না আসে, সে জন্য জবাবদিহি গুরুত্বপূর্ণ। জবাবদিহি ও ফিরে যাওয়া একটা আরেকটার পরিপূরক।