পুলিশের অবহেলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন

নরসিংদীর মনোহরদীতে মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হাশেমকে (৭৫) রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন করার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের অবহেলায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে আবুল হাশেমর পরিবার ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধার প্রতি এই অবেহলার ঘটনায় এলাকায় তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।

জানা যায়, মনোহরদী উপজেলার চরমান্দালিয়ার আবুল হাশেম গতকাল রোববার বিকেল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নিজ বাড়ীতে মারা যান। ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের মাধ্যমে এ খবর পেয়ে মনোহরদী উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মতিউর রহমান বিষয়টি মনোহরদী থানা পুলিশকে জানান। আজ সোমবার সকাল দশটায় মরহুমের জানাজার সময় নির্ধারণ করে পরিবার। পরে থানার পরামর্শে জানাজার সময় একঘণ্টা পিছিয়ে ১১টা করা হয়। পুলিশ না আসায় বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই একাত্তরের এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করা হয়।

মনোহরদী উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বারবার থানায় জানানোর পরও পুলিশের এমন আচরণ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার শামিল।
নিয়ম অনুযায়ী, জানাযা শেষে মুক্তিযোদ্ধার লাশ জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে, বিউগলে করুণ সুর বাজিয়ে রাষ্ট্রীয় সালাম ও এক মিনিট নিরবতা পালন করার কথা।

মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেমের ছেলে বাবুল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে জানাজায় অংশ নিতে প্রায় হাজারখানেক লোক সমাগম হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পক্ষে দুজন প্রতিনিধিও উপস্থিত হন। বেলা ১১টা পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় সন্মান জানাতে পুলিশের কোনো সদস্য আসেননি। তখন আবার ফোন করা হলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় তাঁরা কাছাকাছি চলে এসেছেন। ততক্ষণে জানাজায় অংশ নিতে আসা লোকজন রোদে-তাপে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল। এরপর আরও আধঘণ্টা অপেক্ষা করে সাড়ে ১১টার পরে নামাজে জানাজা শেষে আবুল হাসেমকে দাফন করা হয়। এরপর বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে পুলিশে এসে পৌঁছায়।

চরমান্দালীয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. শহিদুল্লা জানান, ‘শুধুমাত্র পুলিশের অবহেলার কারণেই একজন মুক্তিযোদ্ধা তার প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় সম্মানটুকু পেলেন না। এটা খুবই দুঃখজনক একটা ঘটনা হয়ে থাকলো। আমরা খুবই মর্মাহত ও লজ্জিত। ’
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শফিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুক্তিযোদ্ধার জানাজায় পুলিশের রাষ্ট্রীয় সম্মান দেখাতে না পারার ঘটনাটি মিস কমিউনিকেশনের কারণে ঘটেছে। সবকিছু শুনে আমি মনোহরদী থানার ওসিকে ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের কাছে পাঠিয়েছি। ওসি তাদের কাছে স্বশরীরে গিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে এসেছেন। ’

এদিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া একজন মুক্তিযোদ্ধার দাফনের ঘটনায় নরসিংদীর অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ফেসবুকে নূর হোসেন নামের একজন লিখেছেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হাশেমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া দাফন করার ঘটনায় এলাকার একজন ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকতাদের সুদৃষ্টি কামনা করছি। ’