জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার এটাই সময়: প্রধানমন্ত্রী

মাদ্রিদে কপ-২৫ লিডার্স সামিটে ‘অ্যাকশন ফর সারভাইবাল: ভালনারেবল ন্যাশনস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২ ডিসেম্বর, মাদ্রিদ। ছবি: পিআইডি
মাদ্রিদে কপ-২৫ লিডার্স সামিটে ‘অ্যাকশন ফর সারভাইবাল: ভালনারেবল ন্যাশনস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২ ডিসেম্বর, মাদ্রিদ। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের মতো জলবায়ুজনিত অরক্ষিত দেশগুলোর জন্য অস্তিত্বের হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আজ সোমবার স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে শুরু হওয়া জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৫ লিডার্স সামিটে ‘অ্যাকশন ফর সারভাইবাল: ভালনারেবল নেশনস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হই, তাহলে শিশুরা আমাদের ক্ষমা করবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকে ধরিত্রী সম্মেলন শুরু হওয়ার পর আমরা গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাসের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হইনি। এর নিঃসরণ এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রবণতা বিশ্বের জন্য এখনো টেকসই নয়। মোকাবিলার সীমিত সক্ষমতা এবং সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে আমাদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির ধকল বয়ে বেড়াচ্ছি, অথচ এ ক্ষেত্রে আমাদের যৎসামান্য অথবা কোনো দায়ই নেই। এটি মারাত্মক অবিচার এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছে। ঝুঁকি, প্রভাব এবং মোকাবিলার সক্ষমতার অভাব রয়েছে—এমন অরক্ষিত দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রয়োজনের সমাধানের জন্য একটি উপযুক্ত কাঠামো তৈরির বিষয়ে আলোচনা শুরু করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ডাচ্ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট কার্লোস আলভারাডো কুইসাদা, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিলদা হেইন, ইউএনএফসিসিসির নির্বাহী সম্পাদক প্যাট্রিসিয়া এস্পিনোসা এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচলেট জেরিয়া বক্তব্য দেন।

প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান:
পরিবেশের আরও অবনতি রোধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং প্যারিস চুক্তির সব ধারাসহ প্রাসঙ্গিক সব বৈশ্বিক চুক্তি ও প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কপ-২৫-এর সাধারণ গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, প্যারিস চুক্তিতে ‘অভিন্ন কিন্তু পৃথকীকৃত দায়িত্ব’-এর নীতির ভিত্তিতে বিশেষ পরিস্থিতি এবং স্বল্পোন্নত দেশসমূহ ও ‘বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহ’-এর প্রয়োজনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিটি সরবরাহপ্রক্রিয়ায় এ স্বীকৃতি মেনে চলতে হবে।

পরিস্থিতি পয়েন্ট অব নো রিটার্নের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের এখন সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ৪৫ শতাংশ কমিয়ে এনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হ্রাস করা। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যাবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে। বাংলাদেশে ১ কোটি ৯০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরী প্রভাব বন্ধ করা না গেলে আমরা কখনোই এসডিজি অর্জন এবং দারিদ্র্য নির্মূল করতে পারব না।’