চিপসসহ শিশুখাদ্যে খেলনা দিলে ব্যবস্থা

চিপসের প্যাকেটসহ বিভিন্ন শিশু খাদ্যপণ্যে আকৃষ্ট করার জন্য প্লাস্টিকের খেলনা বা স্টিকার দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। এটা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা হলেও সম্প্রতি হাইকোর্টের এক নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এসবের ব্যবহার থেকে বিরত থাকার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অন্যথায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

শিশুদের প্রলুব্ধ করার জন্য বাজারে নানা কোম্পানির চিপসের প্যাকেটে খাবারের সঙ্গে ছোট ছোট খেলনা দেওয়া হয়। চিপস ছাড়া বিভিন্ন খাদ্যের সঙ্গেও তা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে তা নিয়ে কখনো কথা উঠলেও মাথা ঘামায়নি কেউ। চিকিৎসকেরা বলছেন, এ ধরনের খেলনার কারণে শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি থাকে।

বিএসটিআই গণমাধ্যমে চিপসসহ শিশু খাদ্যপণ্যের প্যাকেটে খেলনা ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএসটিআই থেকে সার্টিফিকেশন মার্কস লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের প্রলুব্ধ করার জন্য চিপসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের প্যাকেটে খেলনা, স্টিকার ইত্যাদি ব্যবহার করে বাজারজাত করছে। এতে খাদ্যদূষণের পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিপসসহ শিশু খাদ্যপণ্যে খেলনাজাতীয় জিনিস ব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসটিআই। যেসব প্রতিষ্ঠান এসব খেলনা ব্যবহার করছে, তাদের ওই সব পণ্য বাজার থেকে দ্রুত প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেছে সংস্থাটি। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিএসটিআই।

জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের থোরাসিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ কে এম একরামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, চিপসের প্যাকেটে ছোট ছোট খেলনা দেওয়া থাকে। আর বাচ্চারা তা প্রায়ই মুখে নেয়। অনেক সময় বাচ্চা তা গিলে ফেলে। আসলে তা শ্বাসনালিতে চলে যায়। ফলে বাচ্চার খুব শ্বাসকষ্ট হয়। যদি খেলনাটা বড় হয় তাতে মৃত্যুঝুঁকিও থাকে।

খেলনার মধ্যে গাড়ির চাকা হলে খুব ভয়ংকর বলে জানান এ কে এম একরামুল হক। তিনি আরও বলেন, ‘প্যাকেটের সঙ্গে বাঁশি দেওয়া হয় বেশি। যেটা ফুঁ দিয়ে বাজানো যায়, আবার টান দিয়েও বাজানো যায়। বাচ্চারা যদি টান দিয়ে বাজায়, তাহলে তা ভেতরে গিয়ে শ্বাসনালিতে আটকে যায়। এই রকমের অনেক শিশু পাই আমরা। বিদেশে এসবের ব্যাপারে সতর্কীকরণ বাণী থাকে।’

বিএসটিআইয়ের বিজ্ঞপ্তিকে সাধুবাদ জানিয়ে একরামুল হক বলেন, ‘এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল। দেরি হলেও এটা খুব ভালো কাজ হয়েছে। সবাই সতর্ক হলে আমাদের বাচ্চারা নিরাপদে থাকবে।’

বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক মো. মুয়াজ্জেম হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে হাইকোর্টের একটি নির্দেশ পত্রিকায় দেখতে পেয়েছি। তার পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।’

চিপসের প্যাকেটে খেলনা ঢুকিয়ে কীভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে—সে বিষয়ে গত ১৭ নভেম্বর হাইকোর্ট বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) প্রতিবেদন দিতে বলেন। গত ৪ নভেম্বর আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান এ বিষয়ে রিট আবেদন করেছিলেন। পাশাপাশি একটি রুলও জারি করা হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে বিএসটিআইকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

এ ছাড়া চিপসের প্যাকেটসহ অন্যান্য শিশু খাদ্যপণ্যের প্যাকেটের মধ্যে খেলনা না দিতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, এম এম ইস্পাহানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও হেড অব মার্কেটিং, ইনগ্রিন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও হেড অব মার্কেটিংকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।