মুসলিমার স্বপ্নপূরণ নিয়ে সংশয়

মুসলিমা আক্তার
মুসলিমা আক্তার

বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মা গৃহিণী। যেটুকু ফসলের জমি ছিল তা এ বছর নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হয় মুসলিমা আক্তারের। হাতে ভর্তি হওয়ার টাকা ছিল না। ময়মনসিংহ সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এগিয়ে এলে তাঁর ভর্তির সুযোগ হয়।

মুসলিমার বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কুষ্টিয়া নদীর পার গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মো. ইউনুস আলী। মা কমলা বেগম। মুসলিমারা চার বোন। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট বোন নবম শ্রেণির ছাত্রী। দুই মেয়ের পড়াশোনার টাকা জোগাড় করা রাজমিস্ত্রি বাবার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

গত রোববার কথা হয় মুসলিমা ও তাঁর মা কমলা বেগমের সঙ্গে। কমলা বেগম বলেন, মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তাঁরা খুশি হয়েছিলেন। ইউএনওর কল্যাণে তাঁদের মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হয়েছেন। কিন্তু এখন সমস্যা হলো তাঁর পড়াশোনার খরচ নিয়ে। ঢাকায় রেখে মেয়েকে পড়াশোনা করানোর মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই।

কমলা বেগম জানান, মুসলিমার বাবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত। তাই তিনি বেশি কাজ করতে পারেন না। এসবের মধ্যে নদীভাঙনে তাঁদের চার কাঠা ফসলের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় খুবই বিপদে আছেন তাঁরা।

মুসলিমাদের বসতঘর বিদ্যাগঞ্জ রেলস্টেশনের পাশে রেলের জমিতে। ময়মনসিংহে রেলওয়ের জমিতে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। যেকোনো দিন তাঁদের ঘরটিও উচ্ছেদের মুখে পড়তে পারে।

মুসলিমা জানান, তিনি গ্রামের সদর উপজেলা মিলেনিয়াম উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর ভর্তি হন ময়মনসিংহের সরকারি আনন্দ মোহন কলেজে। প্রতিদিন বাড়ি থেকে ময়মনসিংহে এসে ক্লাস করতেন। অটোরিকশায় করে আসতে খরচ বেশি পড়ত। তাই ট্রেনে আসা–যাওয়া করতেন। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ক্লাস ধরতে সাতটায় ট্রেন ধরতেন। আটটার আগে ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছে দুই ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হতো। ক্লাস শেষ হতো বেলা দেড়টায়। কিন্তু ফিরতি ট্রেন ছিল বেলা তিনটায়। বেলা তিনটার ট্রেন কোনো কোনো দিন দেরি করে সন্ধ্যার পর ছেড়েছে। তাই অনেক দিন দীর্ঘ সময় ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীরে পড়তে বসতেন। কিন্তু ইচ্ছা ছিল যত কষ্টই হোক না কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে।

মুসলিমা বলেন, তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর বাবা ভর্তির টাকা জোগাড় করতে পারেননি। পরে তিনি নিজেই যান ময়মনসিংহ সদরের ইউএনও শেখ হাফিজুর রহমানের কাছে। ইউএনও তাঁকে ভর্তির টাকা দেন। গত ১৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হবে। কিন্তু এখনো ঢাকায় থাকার কোনো নিশ্চয়তা তিনি পাননি। পরিবারের পক্ষে তাঁর ঢাকায় থাকার সংস্থান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘আমি যেকোনোভাবেই হোক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। প্রয়োজনে ঢাকায় গিয়ে কোনো কাজ জোগাড় করে অথবা টিউশনি করে হলেও পড়তে চাই।’

ইউএনও শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, মুসলিমার বিষয়টি জানার পর তিনি তাঁকে ভর্তি হওয়ার মতো টাকা দিয়ে কিছুটা সহযোগিতা করেছেন। তিনিও চান মুসলিমা পড়াশোনা চালিয়ে যাক।