সবজির জমজমাট কেনাবেচা

প্রতিদিন সূর্যের আলো ফুটতেই সিলেটের টুকেরবাজারে বিক্রির জন্য বিভিন্ন জাতের সবজি নিয়ে আসেন চাষিরা। এরপর চলে বিকিকিনি। গত রোববার সকাল ছয়টায়।  ছবি: প্রথম আলো
প্রতিদিন সূর্যের আলো ফুটতেই সিলেটের টুকেরবাজারে বিক্রির জন্য বিভিন্ন জাতের সবজি নিয়ে আসেন চাষিরা। এরপর চলে বিকিকিনি। গত রোববার সকাল ছয়টায়। ছবি: প্রথম আলো

ভালো দাম পাওয়ায় সিলেটে আগাম শীতকালীন সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। ফলে স্থানীয় কৃষকের উৎপাদিত সবজি দিয়ে সিলেটের মানুষের শীতকালীন সবজির চাহিদা মিটছে। আর স্থানীয় সবজির জন্য প্রখ্যাত হয়ে উঠেছে শহরতলির টুকেরবাজার। চাহিদা থাকায় আশপাশের উপজেলা থেকে এ বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসছেন চাষিরা। এখান থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে সবজি।

জেলা কৃষি কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তথ্যে জানা গেছে, গত দুই-তিন বছরে সিলেটের স্থানীয় সবজি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদা থাকায় আগাম সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। গত বছর সিলেটে সবজি চাষ হয়েছে ২৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এবার দুই হাজার হেক্টর বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও বীজ এবং কৃষি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আগাম সবজি চাষ লাভজনক, এমন প্রচারণায় অনেকেই এখন সবজি চাষে ঝুঁকছেন। ফলে আগে চাষের উপযোগী জমি থাকলেও সেগুলো ফেলে রাখা হতো, এখন সেগুলোতে চাষ হচ্ছে শীতকালীন সবজির।

গত রোববার সকালে টুকেরবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট শহরতলি, সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, এমনকি পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ সুরমা এবং বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাজারে বিক্রির জন্য আনা হয়েছে শীতকালীন আগাম সবজি। এর মধ্যে লালশাক, সরিষাশাক, মুলা, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে। বাজারটি সুরমা নদীসংলগ্ন হওয়ায় আশপাশের এলাকা থেকে নৌকা এবং বিভিন্ন মাধ্যমে বাজারে সবজি নিয়ে আসছেন। পাইকারি ক্রেতারা ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি নিয়ে হাজির হন ভোর থেকেই। সেই সঙ্গে রয়েছে খুচরা বিক্রেতাদের ভিড়। বাজারে চাষিরা সরাসরি বিক্রি করছেন তাঁদের উৎপাদিত সবজি।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি টমেটো ৭৫-৮০ টাকা, ফুলকপি ৩৫-৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০-৩৫ টাকা, মুলা ২৫-৩৫ টাকা, লাউয়ের আকারভেদে ১৫-৩৫ টাকা এবং বিভিন্ন শাক ১০০ আঁটি ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবজিগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। এর মধ্যে বেশি আসে টুকেরবাজার গ্রাম, মাসুকগঞ্জ, বাদে আলী, মইয়ার চর, গোপাল, দক্ষিণ সুরমার কামালবাজার, ইনাতাবাদ, খালপাড়, দর্শা এবং পবাইল গ্রাম থেকে। এ ছাড়া ছাতক ও বিশ্বনাথের লামাকাজি থেকেও সবজি আসে। ভোর থেকে সকাল আটটার পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। তার আগেই ভিড় জমান পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা। তিন বছর ধরে টুকেরবাজার স্থানীয় সবজি আড়ত হিসেবে গড়ে উঠেছে।

টুকেরবাজার গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘এবার দুই বিঘা জমিতে আগাম টমেটো ও লাউ লাগিয়েছিলাম। সেগুলো বিক্রি করে এখন পর্যন্ত ভালোই লাভ হয়েছে। জমিতে এখনো অনেক ফসল রয়েছে। আগাম চাষ করায় বাজারে চাহিদা রয়েছে, সে জন্য ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। ৪০ কেজি টমেটো তিনি ৮০ টাকা কেজি পাইকারি দরে বিক্রি করেছি।’

সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার বাসিন্দা রাজু আহমদ জানান, সকাল নয়টায় কাজে বের হন। ভোরে উঠে তাই বাজার সেরে নেন। তাজা সবজির জন্য গত বছর থেকে টুকেরবাজারেই আসেন তিনি। দামাদামিও বেশি করেন না বিক্রেতারা।

পাইকারি সবজি বিক্রেতা হোসেন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে শহরে বিক্রির জন্য নগরের পাইকারি হাট বন্দরবাজার এবং সোবহানীঘাট থেকে সবজি কিনতাম। সেগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসে। আর টুকেরবাজারে সব সবজি তাজা থাকে। সে জন্য খুচরা ক্রেতারা দাম কিছু বেশি হলেও ক্রেতারা আপত্তি করেন না।

জেলা বাজার কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মোর্শেদ কাদের বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে চাষিদের জন্য বাজার তৈরি করে দেওয়া। টুকেরবাজারে তাজা সবজির জন্য তিন বছর থেকে ক্রেতাদের পরিমাণ বেড়েছে। সে জন্য চাষিরাও খুশি।’

সিলেট কৃষি কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সালাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক বছরে সিলেটে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। স্থানীয় সবজি স্থানীয় চাহিদা মেটাচ্ছে। আগাম সবজি চাষে লাভবান হওয়ার বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সে সঙ্গে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির পাশাপাশি উন্নত বীজ ও সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।