পথ খুলছে বাণিজ্যিক উৎপাদনের

পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রজাতির ছাগল হিলি ব্রাউন বেঙ্গল (এইচবিবি) নিয়ে গবেষণা চলছে। এর ফলে এই প্রজাতির ছাগলের বাণিজ্যিক উৎপাদনে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে দুর্গম এলাকার পাড়া-গ্রামে এই ছাগল লালনপালন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তিন পার্বত্য জেলার অধিকাংশ এলাকায় হিলি ব্রাউন বেঙ্গল দেখা যায়। সমতল অঞ্চলের ব্ল্যাক বেঙ্গলের প্রজাতির মতোই ব্রাউন বেঙ্গল পাহাড়ি অঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতির ছাগল। ব্রাউন বেঙ্গল ছাগলের রং বাদামি। অনেকটা মায়া হরিণের মতোই সুন্দর ও চঞ্চল বুনো স্বভাবের। একটি পূর্ণবয়স্ক ছাগলের গড় ওজন ১৫ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত হয়।

পাহাড়ের উন্মুক্ত পরিবেশে এই প্রজাতির ছাগল বেড়ে ওঠে। গৃহে লালনপালন করা হয়। অবশ্য পাহাড়ির পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনের কারণে কিছুটা বন্য স্বভাবের। ফলে এই ছাগলের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি।

বান্দরবান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলামুর রহমান বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতেই গয়াল (গাউর) ও হিলি চিকেনের (পাহাড়ি অঞ্চলের মুরগি) পাশাপাশি হিলি ব্রাউন বেঙ্গল গোট নিয়ে গবেষণা চলছে। এর ফলে বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা বাড়ার সুযোগ রয়েছে।

এখন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিএলআরআই) বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির আঞ্চলিক কেন্দ্রে এইচবিবি নিয়ে গবেষণা চলছে। এর বংশগতির স্থিতিশীলতা ও পরিবেশগত উন্নয়নই হচ্ছে গবেষণার উদ্দেশ্য। ১৬১ একরের বিশাল পাহাড়ি জমিতে এই কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।

কেন্দ্রের কর্মরত ব্যক্তিরা জানান, ২০১২ সাল থেকে গবেষণা শুরু হয়েছে। এ জন্য বান্দরবানের থানচি, রুমা ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে ছাগল সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণায় ৩০৬টি হিলি ব্রাউন বেঙ্গল প্রজাতির ছাগলের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে মা ও বাচ্চাদের একসঙ্গে এবং পাঁঠাগুলো আলাদা রাখা হয়েছে। এই প্রজাতির একটি ছাগী এক থেকে চারটি পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে। অবশ্য দু-তিনটি বাচ্চা দেওয়ার সংখ্যা বেশি। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, এক থেকে তিন মাস বয়সী বাচ্চার মৃত্যুর হার বেশি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিছামারা এলাকায় আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ঘিলাতলি এলাকার হুমায়রা বেগম হিলি ব্রাউন বেঙ্গল প্রজাতির ছাগল লালনপালন করেন। তাঁরা জানান, ছাগলগুলোকে পাহাড়ের বনাঞ্চলে সকালে ছেড়ে দিলে সারা দিন ঘাস খায়। বিকেলে গৃহে ফিরে আসে। এ জন্য খুব বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। এসব ছাগলের মাংসে চর্বি কম। বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে।

বিএলআরআইয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কেএম সাদ্দাম হোসেন বলেন, হিলি ব্রাউন বেঙ্গল ছাগল নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। দেখা গেছে অন্যান্য ছাগলের চেয়ে এই প্রজাতির ছাগলের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। পার্বত্যাঞ্চলে অনেক চাষ অনুপযোগী পাহাড়ি বনাঞ্চল রয়েছে। সেখানে উন্মুক্ত পরিবেশে সহজে এই প্রজাতির ছাগল বাণিজ্যিকভাবে পালন করা সম্ভব। তাঁদের গবেষণা সফল হলে সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।