ঝুলে থাকা শত মামলা নিয়ে পুলিশের বিশেষ উদ্যোগ

থানায় ঝুলে থাকা দেড় শতাধিক মামলা নিয়ে পুলিশ সুপারের বিশেষ উদ্যোগ। শান্তি সমাবেশে কথা বলছেন পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম। গতকাল নালিতাবাড়ী থানা প্রাঙ্গণে।  প্রথম আলো
থানায় ঝুলে থাকা দেড় শতাধিক মামলা নিয়ে পুলিশ সুপারের বিশেষ উদ্যোগ। শান্তি সমাবেশে কথা বলছেন পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম। গতকাল নালিতাবাড়ী থানা প্রাঙ্গণে। প্রথম আলো

রাজু মিয়া পাঁচ বছর ধরে মাদকের একটি মামলার বোঝা নিয়ে ঘুরছেন। তিনি ঢাকায় চাকরি করেন। মামলাটি দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ায় তামিল হয়ে গেছে (মুলতবি)। তাই রাজু ও তাঁর পরিবার দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

পুলিশের আহ্বানে গতকাল সোমবার রাজুর (২৫) পক্ষে তাঁর মা ফরিদা ইয়াসমিন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল মামলা শুনানিতে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি তাঁর ছেলের এক মাসের মধ্যে আদালতে হাজিরা করার নিশ্চয়তা দেন এবং দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির অনুরোধ জানান।

শুধু রাজুর ঝুলে থাকা মামলা নয়, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার এমন দেড় শতাধিক তামাদি মামলার নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আশলাফুল আজীম। এতে করে ঝুলে থাকা মামলাগুলোই নিষ্পত্তি হবে না, মামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দুশ্চিন্তাও দূর হবে। মামলার বাদী ও বিবাদীরা মামলার জাল থেকে রেহাই পাবেন।

নালিতাবাড়ী থানা সূত্র জানায়, মাদক, হত্যা, যৌতুক, নারী নির্যাতন, জমিসংক্রান্তসহ বিভিন্ন মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। নালিতাবাড়ী থানায় এ রকম ১৩৯টি মামলা আছে। এসব মামলাকে তামিল বা মুলতবি মামলা বলা হয়ে থাকে। মামলাগুলো সচল করতে গতকাল জেলা পুলিশের আয়োজনে জঙ্গি, মাদক, ইভ টিজিং নির্মূল ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল মামলা নিয়ে বিশেষ শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নালিতাবাড়ী থানা প্রাঙ্গণে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে এ সমাবেশ।

এ সময় আসামিদের পরিবার মামলা সম্পর্কে সরাসরি পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পান। এ ছাড়া আসামিদের পরিবার মামলার বিবরণী প্রকাশ করেন। পাশাপাশি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার অবস্থা তুলে ধরেন এবং খাতায় লিপিবদ্ধ করেন। এ সময় কবে আসামিদের আদালতে হাজির করবেন, তার তারিখ নির্ধারণ করে আসামিদের পরিবার।

এর আগে বিশেষ শান্তি সমাবেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল মামলা সচল করতে ‘আমাদের কর্তব্য ও জঙ্গি, মাদক, ইভ টিজিং নির্মূলে নাগরিকের ভূমিকা’ শীর্ষক স্বাগত বক্তব্য দেন এসপি কাজী আশলাফুল আজীম।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক, রাজনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ, কাকরকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদ উল্লাহ তালুকদার, উপজেলার কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াজ করুণী, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য বিল্লাল হোসেন চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) জাহাঙ্গীর আলম।

রামচন্দ্রকুড়া গ্রামের জেসমিন আক্তার বলেন, তাঁর স্বামী ভয়ে আদালতে হাজির হন না। তাই মামলাটা তামাদি হয়েছে। ফলে তাঁরা সব সময় এটা নিয়ে চিন্তায় থাকেন। এখন পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর স্বামী হাজিরা দিলে তাঁরা জামিনে সহযোগিতা করবেন। তাই তিনিও কথা দিয়েছেন, তাঁর স্বামী এক মাসের মধ্যে আদালতে হাজিরা দেবেন।

মণ্ডলিয়াপাড়া গ্রামের আবু বক্কর বলেন, তাঁর ছেলে একটি মামলার আসামি। তাই তাঁদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এসপি তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁর ছেলে আদালতে হাজিরা দিলে পুলিশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে। এটা শোনার পর তিনি অনেক ভরসা পাচ্ছেন।

পুলিশ সুপার কাজী আশলাফুল আজীম বলেন, বিভিন্ন মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকার কারণে বাদী ও বিবাদী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই তাঁরা এই মামলাজট শূন্যের কোঠায় আনতে চান। এতে করে মামলা নিয়ে বছরের পর বছর ঘুরতে হবে না। তিনি জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে এ কাজে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন।