চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শৌচাগার কম, বিড়ম্বনায় ছাত্রীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবনটি চারতলার। এ ইনস্টিটিউটে ছাত্রী আছেন প্রায় তিন শ। কিন্তু তাঁদের জন্য আলাদা শৌচাগার নেই। এখানে ছাত্র ও ছাত্রীকে একই শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। কখনো কখনো দাঁড়াতে হয় সার বেঁধে। শৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে প্রায়ই এ রকম অস্বস্তিতে পড়েন ছাত্রীরা।

শুধু এই ইনস্টিটিউট নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অন্তত ২০টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত শৌচাগার নেই। আবার যেগুলো আছে তা অপরিচ্ছন্ন, নয়তো ভাঙাচোরা।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদের অধীনে ৬টি ইনস্টিটিউট ও ৪৮টি বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ছাত্রী ৯ হাজার ১৭৯ জন। ছাত্রীদের জন্য মোট শৌচাগার ৮০টি। অর্থাৎ, প্রতি ১১৪ জন ছাত্রীর জন্য একটি শৌচাগার, যা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয় বলে ছাত্রীদের ভাষ্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য পৃথক কোনো কমনরুম নেই।

এই অবস্থায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক শৌচাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন ছাত্রীরা।

ক্যাম্পাসে, বিশেষ করে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে, ছাত্রীদের জন্য শৌচাগারের স্বল্পতা রয়েছে, এ কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। শৌচাগার বাড়াতে কাজ শুরু করা হবে। পাশাপাশি শৌচাগারগুলো যাতে সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখা যায়, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

কলা অনুষদ বেহাল
সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করে জানা গেছে, কলা অনুষদে বিভাগ ১৫টি। এসব বিভাগে ছাত্রী প্রায় সাড়ে তিন হাজার। চারতলা এই ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় ছাত্রীদের জন্য মাত্র চারটি শৌচাগার রয়েছে। সে হিসাবে প্রতি ৮৭৫ জন ছাত্রী ব্যবহার করেন একটি শৌচাগার। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় যাঁরা ক্লাস করেন, তাঁদের শৌচাগার ব্যবহারের জন্য দ্বিতীয় ও নিচতলায় নামতে হয়। ছোট আকারের এসব শৌচাগারে নেই বেসিন ও বাতি। বেশির ভাগ সময় অন্ধকার ও অপরিচ্ছন্ন থাকে। বেশির ভাগ ছাত্রীই এসব শৌচাগার ব্যবহার করতে চান না।

জীববিজ্ঞান অনুষদে নয়টি বিভাগের মধ্যে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ছাত্রীদের জন্য শৌচাগার নেই। অন্য বিভাগগুলোতে শৌচাগার আছে, কিন্তু অনেকগুলোই ব্যবহারোপযোগী নয়।

নাম প্রকাশ না করে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার সময় অনেক কষ্ট হয়। কারণ, দেখা যায়, পরীক্ষার কেন্দ্র পড়ল তৃতীয় তলায়, কিন্তু শৌচাগার ব্যবহার করতে যেতে হচ্ছে নিচতলায়। 

আরও খারাপ অবস্থা শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। এই ইনস্টিটিউটে অন্তত দুই শ ছাত্রী থাকলেও শৌচাগার রয়েছে একটি। ছাত্রীদের অভিযোগ, শৌচাগারটি বেশির ভাগ সময় অপরিষ্কার থাকে।

অন্যদিকে, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ভিন্ন চিত্র। প্রায় দুই হাজার ছাত্রীর জন্য সেখানে শৌচাগার আছে ৩৬টি। আর নতুন তৈরি হওয়া এ কে খান আইন অনুষদের ভবনে প্রায় তিন শ ছাত্রীর জন্য রয়েছে ৮টি শৌচাগার।

ছাত্রীদের অভিযোগ, বেশির ভাগ শৌচাগারে আয়না নেই। টিস্যু ফেলার ঝুড়ি নেই। কমোডগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। বেসিনের অবস্থাও একই। সাবান দেওয়া হয় না। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাব রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফী নিতু প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মাত্র একটি শৌচাগার। বেশির ভাগ সময় ক্যাম্পাসে শৌচাগারগুলো অপরিষ্কার থাকে। তাই ছাত্রীদের জন্য আরও শৌচাগার বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

শাটল ট্রেনে শৌচাগার নেই
চট্টগ্রাম নগর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম শাটল ট্রেন। নগর থেকে ক্যাম্পাসে আসতে ট্রেনের সময় লাগে এক ঘণ্টা। প্রতিদিন অন্তত সাত হাজার ছাত্রী এই ট্রেনে আসা–যাওয়া করেন। কিন্তু শাটলে শৌচাগার নেই। 

স্বীকার ও আশ্বাস
কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন মো. সেকান্দর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কলা অনুষদের ভবনটি পুরোনো। এখানে নানা ধরনের সমস্যা আছে। শৌচাগার থেকে লাইট ও অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায়। নতুন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবনের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। ওই ভবনে উঠলে শৌচাগারের সমস্যা থাকবে না।

শৌচাগারের সংখ্যা বাড়াতে কী করা যায়, তা জানাতে প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে কথা হয়েছে, এমন তথ্য জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার। তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় শৌচাগার কম থাকার বিষয়টি নজরে এসেছে। কলা অনুষদের শৌচাগারের অবস্থা খারাপ। বর্ষার সময় এসব শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। উপাচার্য শিরীণ আখতার প্রথম আলোকে জানান, পুরোনো শৌচাগারগুলো শিগগিরই মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার ব্যবহারের ফলে মেয়েদের জরায়ুতে প্রদাহসহ নানা ধরনের অসুখ হতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাহানারা চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রয়োজনের সময়ে শৌচাগার ব্যবহার না করলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনসহ (ইউটিআই) নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। এই ইনফেকশন কিডনি পর্যন্ত চলে যেতে পারে। এ ছাড়া তলপেটে ব্যথাও হতে পারে।’