জাবি সচল হবে কি না, সিদ্ধান্ত কাল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে আগামীকাল বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় সিন্ডিকেটের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবদুস সালাম মিঞাঁ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ২৩ আগস্ট শুরু হওয়া এ আন্দোলন ১৮ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন মোড় নেয় উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে। ১০ দিন উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ রাখার পর ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরদিন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাঁদের পিটিয়ে সরিয়ে দেন। সেদিনই জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ২৮ দিন পর আবার সিন্ডিকেট সভা ডাকল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রম চালু করার দাবিতে বেশ কয়েকবার উপাচার্য বরাবর আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেশনজট, প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তা ও টিউশনিতে সমস্যার কথা উল্লেখ করে গত ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা শুরু করার দাবিতে উপাচার্য বরাবর আবেদন জানান ১৩ জন শিক্ষার্থী। একই দাবিতে ২৬ নভেম্বর আরও ৮ জন শিক্ষার্থী ও ২৮ নভেম্বর প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী আবেদন জানান।

এর আগে গত ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ হল খুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সচল করার দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন। সংগঠনের সমন্বয়কারী অধ্যাপক এ এ মামুন স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘বন্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।’

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ হল খোলাসহ অন্যান্য দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

সর্বশেষ ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে হল খোলা না হলে আন্দোলন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় কয়েকজন শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার সকালে তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

এরপর আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে হল খুলে ক্লাস-পরীক্ষা সচল করার দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল তা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছি। উপাচার্য ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। আমরা আশা করি একটি সুন্দর সিদ্ধান্তে যাবেন তিনি।’

বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য নুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামীকাল সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা চালু ও হল খোলার ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। সভায় সিন্ডিকেট সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সচল করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’