প্রতিরক্ষা চুক্তির আলোচনা চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র

র‍্যান্ডল শ্রাইভার। ছবি: মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট
র‍্যান্ডল শ্রাইভার। ছবি: মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট

প্রতিরক্ষা চুক্তি ‘আকসা’ ও ‘জিসোমিয়া’ সইয়ের জন্য বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে এ নিয়ে দুই দেশ আলোচনার টেবিলে আছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

দুই দিনের সফরে মঙ্গলবার সকালে প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী র‍্যান্ডল শ্রাইভার। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর সঙ্গে আলোচনা করেন। তাঁদের এই আলোচনায় বিষয়টি গুরুত্ব পায়।

মঙ্গলবার দিনের প্রথম ভাগে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক সরকারের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন র‍্যান্ডল শ্রাইভার। এরপর বিকেলে তিনি প্রথমে তারিক আহমেদ সিদ্দিক পরে গওহর রিজভীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে জানায়, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে দুই দেশের মধ্যে এখন যে সহযোগিতা আছে, তা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে দুই পক্ষই। অবশ্য প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা দুই দেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর মধ্যে সরাসরি সহযোগিতা ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। প্রতিরক্ষা খাতে কর্মদক্ষতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশেষায়িত প্রশিক্ষণে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের বেশি সংখ্যায় নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা।

জানা গেছে, দুই পক্ষের আলোচনায় অস্ত্র বিষয়ক কেনাকাটা বিষয়ক চুক্তি-আকসা (একুইজেশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট) এবং অস্ত্র বিষয়ক গোপন তথ্য বিনিময় ও সুরক্ষার চুক্তি-জিসোমিয়ার (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) প্রসঙ্গটি এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশ উন্নত প্রযুক্তির হেলিকপ্টার ও রাডার কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কোনো দেশের কাছে উন্নত প্রযুক্তির সমরাস্ত্র বিক্রির আগে সেই দেশের সঙ্গে জিসোমিয়া সই করার বাধ্যবাধকতার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন র‍্যান্ডল শ্রাইভার । এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশ চুক্তি দুটি সইয়ের জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সামুদ্রিক নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সহকারী মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সাগরের বুকে বুকে নতুন চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গ টেনেছেন। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় দুই দেশের এক সঙ্গে কাজের সুযোগের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতায় সাফল্যের প্রসঙ্গ টেনে দুই পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। র‍্যান্ডল শ্রাইভার সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সামর্থ্য বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী বলেও জানিয়েছেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সমস্যার প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসেছে। সহকারী মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী র‍্যান্ডল শ্রাইভার প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন, এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সদস্যদের ভূমিকা রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে।