পাখি রক্ষায় গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি

গাজীপুর পিটিআইয়ের ভেতরে গাছে মাটির হাঁড়ি।  ছবি: প্রথম আলো
গাজীপুর পিটিআইয়ের ভেতরে গাছে মাটির হাঁড়ি। ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরে অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। এ জন্য যে যার মতো গাছপালা কেটে নির্মাণ করছে অট্টালিকা। এতে পাখিকুল হারিয়ে যাচ্ছে। আগের মতো পাখির কিচিরমিচির শোনা যায় না। তাই পাখি রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন এক ব্যক্তি। শহর এলাকায় পাখিরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি বসিয়েছেন তিনি।

ওই ব্যক্তি হলেন গাজীপুর প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিনটেনডেন্ট মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর শহর ও আশপাশ এলাকা থেকে গাছাপালা অনেকটাই হারিয়ে গেছে। গাছপালার সঙ্গে পাখিও হারিয়ে যাচ্ছে। কমে যাচ্ছে পাখির কিচিরমিচিরও। গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে পিটিআই। প্রতিষ্ঠানের ভেতরে তিন শতাধিক ছোট–বড় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সুপারিনটেনডেন্ট রফিকুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে পাখি রক্ষায় ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষেপ নেন। তিনি তাঁর একজন কর্মী পাঠিয়ে টাঙ্গাইলের কুমারপাড়ায় পাখিদের জন্য বিশেষ ধরনের হাঁড়ির ফরমাশ দেন। কয়েক দিনের মধ্যে হাঁড়ি তৈরি শেষ হলে সেগুলো গাজীপুরে নিয়ে আসা হয়। এই হাঁড়ির দুই পাশ দিয়ে পাখি যাতায়াত করতে পারে। পরে হাঁড়িগুলো ওই প্রতিষ্ঠানের গাছের নিরাপদ স্থানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে সেই হাঁড়িতে পাখির আনাগোনা শুরু হয়েছে।

পাখির নিরাপদ আশ্রয়, পাখি রক্ষা ও তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য হাঁড়িগুলো বসানো হয়েছে। এতে ঝড়, বৃষ্টি, রোদ থেকে পাখিরা বাঁচবে। হাঁড়িগুলোতে ছোট ছোট ছিদ্র করে দেওয়া হয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি ঢুকলেও নিচের ছিদ্রগুলো দিয়ে পড়ে যাবে। তা ছাড়া হাঁড়ির দুই দিকে বড় দুটি মুখ রাখা হয়েছে। এক দিক দিয়ে পাখি ঢুকলে আবার সোজা অন্য মুখ দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে। এতে হাঁড়ির মধ্যে ঢুকতে ও বের হতে পাখির কোনো সমস্যা হবে না।

গাজীপুর পিটিআইয়ের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট হাসিনা আফরিন প্রথম আলোকে বলেন, পিটিআইয়ের ভেতরে কিছু গাছ কেটে নতুন অডিটরিয়াম করা হয়েছে। তার জন্য নতুন করে গাছও লাগানো হচ্ছে। একই সঙ্গে পাখি রক্ষায় গাছে হাঁড়ি বাঁধার কাজ চলছে।

গাজীপুর শহর এলাকার বাসিন্দা ইমরুল ইসলাম বলেন, ‘পাখির প্রতি এমন ভালোবাসা সত্যিই আমাদের অবাক করেছে। শহর এলাকায় পাখি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।’

রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, পাখির নিরাপদ আশ্রয়, পাখি রক্ষা ও তাদের ডিম পাড়ার জন্য হাঁড়িগুলো বসানো হয়েছে। এতে ঝড়, বৃষ্টি, রোদ থেকে পাখিরা বাঁচবে। হাঁড়িগুলোতে বাসা বেঁধে বংশবিস্তার করতে পারবে পাখিরা। বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে পাখিরা।

গাজীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এ টি এম তৌহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাখির প্রতি এমন ভালোবাসার কথা শুনে খুবই ভালো লেগেছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য সবারই পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া উচিত। পাখির জন্য কেউ এমন আয়োজন করে, আমার জানা ছিল না। এই সুন্দর কাজ দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হবেন।’