মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠা

চলছে শীতের পিঠা বিক্রি। গতকাল শিল্পকলা একাডেমির সামনে।  ছবি: প্রথম আলো
চলছে শীতের পিঠা বিক্রি। গতকাল শিল্পকলা একাডেমির সামনে। ছবি: প্রথম আলো

শীত এলে বোঝা যায় পিঠা বাঙালির কতটা পছন্দের। নবান্ন, পৌষ পার্বণ—সব উৎসবই হয় নতুন ধানের চালের পিঠাকে কেন্দ্র করে। হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়ার এ সময়টাই পিঠার। গ্রামের মানুষ প্রায় প্রতিদিনই পিঠার স্বাদ নেয়। তবে শীত শীত বাতাসে পিঠাবঞ্চিত থাকে না নগরবাসীও। অলিগলি থেকে শুরু করে ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাত ও দোকানে তৈরি হয় হরেক রকমের পিঠা। এসব দোকানে গিয়ে নগরবাসী নিচ্ছে পিঠার স্বাদ। অনলাইনে ফরমাশ দিয়ে ঘরে বসেই খাওয়া যাবে পিঠা।

হেমন্তের শুরুতেই শহরের রাস্তার ধারে মাটি ও গ্যাসের চুলা নিয়ে বসে যান মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা। এসব দোকানে মেলে চিতই, ভাপা পিঠা। গরম-গরম ধোঁয়া ওঠা চিতই পিঠার মূল আকর্ষণ ভর্তা। খেজুরের গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি ভাপাও পাওয়া যাবে এসব অস্থায়ী পিঠার দোকানে।

গত কয়েক দিনে মধ্য বাড্ডার আলাতুন্নেছা স্কুল সড়ক, রামপুরা, বনশ্রী, মহাখালী, গুলিস্তান, পল্টন, বেইলি রোড, বাংলামোটর, মিরপুরে, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তেজগাঁও শিল্প এলাকার অলিগলি, ফার্মগেট, কলাবাগান, কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে, মোড়ে, ফুটপাতে, পাড়া-মহল্লায় শীতের পিঠা বিক্রি হতে দেখা যায়।

বাড্ডায় কথা হয় ওবায়দুল হকের সঙ্গে। তিনি ঢাকায় এসেছেন চিকিৎসা করাতে। গ্রামের বাড়িতে শীতে পিঠাপুলি তৈরি হয়। ঢাকায় এসে পথের পাশে গরম পিঠা দেখে লোভ সামলাতে পারেননি তিনি। গরম চিতই পিঠায় ফুঁ দিতে দিতে সরিষার ভর্তা লাগিয়ে খাচ্ছিলেন তিনি। ওবায়দুল হক বলেন, বাড়িতে যেসব পিঠা খাই, সেগুলোর স্বাদ একরকম। সেগুলো আবার রেখে রেখে খাই। ঠান্ডা হয়ে যায়। এখানে গরম-গরম খাওয়ার স্বাদ অন্য রকম।

দোকানিরা বললেন, চিতই পিঠার মূল আকর্ষণ কয়েক পদের ভর্তা। সরিষা, কালোজিরা, ধনেপাতা, শুঁটকি, ডালের ভর্তার চাহিদা বেশি। একটি চিতই পিঠা বিক্রি হয় পাঁচ টাকায়। ভাপা পিঠা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা করে। গতকাল মঙ্গলবার দেখা যায়, চিতই, ভাপার পাশাপাশি নারকেল, কলা, তাল দিয়েও তৈরি পিঠাও দেখা গেছে কিছু দোকানে। মাংস দিয়ে বানানো পিঠা পাওয়া যায় কোথাও কোথাও।

তেজগাঁও×স্টেশন রোডের পিঠার দোকানি দীন ইসলাম জানান, প্রতিদিন তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকার মতো পিঠা বিক্রি করেন। লাভ থাকে ৫০০ টাকার মতো। তিনি দিনে ছয় কেজির মতো চালের গুঁড়া, পরিমাণমতো গুড় ও নারকেল জোগাড় রাখেন। বিকেল চারটার দিকে শুরু হয় তাঁর পিঠা বিক্রি। রাত ১০টার দিকে উপকরণ শেষ হলে দোকানও বন্ধ করে দেন তিনি।

ফার্মগেটে নারী পিঠা বিক্রেতা লাভলীর কাছ থেকে চিতই পিঠা কিনছিলেন জাহানারা মরিয়ম বেগম নামের এক নারী। সঙ্গে জেনে নিচ্ছিলেন চিতই পিঠা বানানোর কৌশল। জাহানারা বললেন, পিঠার মধ্যে চালের গুঁড়া ও পানির পরিমাণ ঠিক রাখা তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সরকারি বিজ্ঞান কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র তৌসিফ আহমদ ও সাকিবুল হাসান মিয়াজি থাকে কলেজ ছাত্রাবাসে। বাড়িতে থাকলে প্রতিদিনই শীতের পিঠা খেত তারা। এখনো অবশ্য তারা শীতের পিঠা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না। ছাত্রাবাস থেকে বেরিয়ে দুকদম হাঁটলেই পিঠার স্বাদ নিতে পারছে।

ছায়ানটের শিক্ষক মৌমিতা বিশ্বাস বলেন, ব্যস্ততার কারণে ঘরে পিঠা তৈরি করার সময় পাওয়া যায় না। শর্টকাটে এখানকার পিঠার দোকানগুলোই ভরসা। এতে সময়ও বাঁচে শীতের আমেজও পাওয়া যায়।

যাঁদের হাতে সময় নেই কিংবা অন্য কোনো কারণে পিঠার দোকানে যেতে পারছেন না, তাঁদেরও চিন্তা নেই। ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করে তাঁরা নিতে পারবেন পিঠার স্বাদ। এ রকম সুযোগ দিচ্ছে ঢাকার বেশ কিছু দোকান।