ভারতের সমর্থন

ইন্দিরা গান্ধী
ইন্দিরা গান্ধী

২৫ মার্চ দিবাগত রাতে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালি প্রথমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে, পরে পরিকল্পিত উপায়ে এ হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এ হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে প্রতিবাদ জেগে ওঠে। ভারতের জনসাধারণ বিপুল সমর্থন জানায় বাঙালির এই মুক্তিসংগ্রামের প্রতি।

২৭ মার্চ ভারতের লোকসভায় বাংলাদেশের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়। লোকসভার সে আলোচনার প্রতিবেদন পরদিন প্রকাশিত হয় কলকাতার দৈনিক পত্রিকা যুগান্তর–এ। লোকসভায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা করেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সে বক্তৃতায় বাঙালির প্রতি তাঁর সমর্থন প্রকাশিত হয়। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘সময় ও পরিস্থিতি দুইয়ের ওপরই সরকার সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।...সকল সময়ে আমরা ব্যথিতদের জন্য সহানুভূতি জানিয়েছি। নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছি। এখনকার মতো এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সরকার হিসেবে আমরা এইটুকুই বলতে পারি।’

‘...পূর্ববঙ্গে এক নতুনের অভ্যুদয় হয়েছে। এ অভ্যুদয় ও ঘটনাপ্রবাহ সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক। জনগণ এক বাক্যে তাদের সংকল্প জানিয়েছেন। আমরা একে স্বাগত জানাচ্ছি—এর অর্থ অন্য দেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ নয়, আমরা এরূপ ঘটনাকে বরাবর মূল্য দিয়েছি এবং এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছি। এই ঘটনার ফলে আমাদের প্রতিবেশী দেশে এক নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে এবং আমরা আশা করি তার ফলে আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হবে। এ জন্য জনগণের সেবাও আমরা ভালোভাবে করতে পারব।’

লোকসভায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরণ সিং বলেন, ‘আমাদের সীমান্তের অতি সন্নিকটে যেসব ঘটনা ঘটছে, ভারত সরকার তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ না করে পারে না। সুতরাং এই সভায় এবং সমগ্র ভারতে যে গভীর আবেগের সঞ্চার হয়েছে, তা স্বাভাবিক। মাননীয় সদস্যগণ ১৯৬৯ সালের ২৮ নভেম্বরের পরবর্তী ঘটনাবলি নিশ্চয়ই অবগত আছেন। ওই সময়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান রচনা এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য তাঁর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।’

>

মুক্তিযুদ্ধের আনন্দ-বেদনাময় পথরেখার বহু চিহ্ন ধরা আছে রাশি রাশি নথিপত্রে। নির্বাচিত কিছু নথির মধ্য দিয়ে মহত্তম সেই সময়টিকে দেখা।

লোকসভায় বাংলাদেশের প্রসঙ্গ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পত্রিকাটি লিখেছে, ‘আজ ভারতীয় সংসদে শেখ মুজিবুর রহমানের অভূতপূর্ব মুক্তিসংগ্রামের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানানো হয়েছে। সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের জন্যে শেখ মুজিবুরের পেছনে রয়েছে সাড়ে সাত কোটি মানুষের অকৃত্রিম সমর্থন। পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ধ্বংস করার জন্য কঠোর সামরিক আইন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিসংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে, সংসদ সদস্যগণ তার প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।

‘দলমতনির্বিশেষে সদস্যগণ পূর্ববঙ্গের গণহত্যা বন্ধ, বিশ্বজনমত গঠন, মানবিক অধিকার কমিশন প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের দৃষ্টি আকর্ষণ, আফ্রো-এশীয় রাষ্ট্রসমূহের সম্মেলন আহ্বান এবং ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমর্থন ও সহানুভূতি জ্ঞাপনের প্রতি সমর্থন ও সহানুভূতি জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সর্বপ্রকার বৈধ ও সময়োচিত ব্যবস্থা অবলম্বনের জন্যে সরকারকে অনুরোধ জানান।

‘শেখ মুজিবুর বাংলাদেশের যে সার্বভৌম আকার ঘোষণা করেছেন, তাকে স্বীকৃতি দানের জন্যেও সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’