ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি মামলায় পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ার শঙ্কা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের শিকার পুলিশের একটি গাড়ি।  ফাইল ছবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের শিকার পুলিশের একটি গাড়ি। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ও অবরোধের পর পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। ছাত্রলীগের উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) একে অপরের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত সিএফসি ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ভিএক্স পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। এর রেশ ধরে কয়েকবার সংঘাতে জড়িয়েছে দুটি পক্ষ।

সংঘাতের মধ্যেই গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ রড ও দা উদ্ধার করে। কিন্তু পরদিন হাটহাজারী উপজেলার এগারো মাইল এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হকের অনুসারী সিএফসি পক্ষের দুই নেতাকে মারধর করা হয়। এ জন্য ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ ভিএক্সের অনুসারীদের দায়ী করা হয়। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ওই দিন রাতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেয় সিএফসি পক্ষ। এ সময় প্রক্টর ও পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।

তবে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের চট্টগ্রাম আগমন উপলক্ষে অবরোধ তিন দিনের জন্য শিথিল করা হয়। কিন্তু এর মধ্যেই দুই পক্ষের মধ্যে মামলার ঘটনা—ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি আবারও অশান্ত হওয়ার দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

মামলা

ছাত্রলীগ ও পুলিশ সূত্র জানায়, সিএফসির পক্ষে সাবেক সহসভাপতি সুমন নাছির বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ আরও ২০ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মামলাটি নথিবদ্ধ হয়। এর আগে শনিবার ভিএক্স পক্ষের মো. জাহিদ হাসান হাটহাজারী থানায় একটি অভিযোগ করেছিলেন। সেটিও মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। এ মামলায় সুমন নাছিরসহ ১৬ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী থানার ওসি মো. মাসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘মারামারির মামলা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আবারও পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ার শঙ্কা

সিএফসির ও ভিএক্সের পাল্টাপাল্টি মামলার পর আবারও ক্যাম্পাস পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পাল্টাপাল্টি মামলার অর্থ হচ্ছে ঝামেলা শেষ হয়নি। এরপর আবার মারামারি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ছাত্রলীগের গ্রুপিং রাজনীতির জন্য যদি ক্যাম্পাসের ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে, তার দায়ভার ছাত্রলীগকেই নিতে হবে।

একই আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরাও। বিভিন্ন বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেন, ‘ছাত্রলীগের অবরোধের কারণে এক দিনে ১০টি বিভাগে পরীক্ষা হয়নি। তাদের মারামারির জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুগতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে—শিক্ষাজটে পড়ে যাব।’

যা বললেন তাঁরা

তাপস সরকার হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত চার পাঁচ মাসে ক্যাম্পাসে ঘটা একটি ঘটনায়ও পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্বিকার রেখে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

তবে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য সভাপতিকেই দায়ী করেছেন ভিএক্স পক্ষের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সভাপতির অনুসারীরা তাঁদের নেতা-কর্মীদের কোনো কারণ ছাড়াই মারধর করেছে। এই কারণে তাঁরা মামলা করেছেন।

ঘটনা ঘটা মাত্র জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ঝামেলা বাড়ত না বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, যাঁরা একে অপরের ওপর হামলা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নয় তো সমস্যার সমাধান হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত। কিন্তু এসব ধারার আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এসব উপপক্ষের মধ্যে গত পাঁচ বছরে অন্তত দেড় শ বার মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। খুনের শিকার হয়েছেন দুজন।