জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের ঝুঁকি কমেনি বাংলাদেশের

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের ঝুঁকি কমেনি বাংলাদেশের। ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় বাংলাদেশ আগের মতোই সপ্তম অবস্থান রয়ে গেছে। তবে জলবায়ুজনিত বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বেড়েছে। অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি বড় দুর্যোগ আঘাত হেনেছে এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ তৃতীয়।

জার্মানিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জার্মানওয়াচ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। স্পেনের বার্সেলোনায় শুরু হওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৫ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সংস্থাটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে।

‘বিশ্ব জলবায়ু ঝুঁকি সূচক-২০২০’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১৯১টি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বড় দুর্যোগ আঘাত হেনেছে।

এ বছরের প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পুয়ের্তোরিকো। গতবারও শীর্ষে ছিল দেশটি। এরপর যথাক্রমে রয়েছে মিয়ানমার, হাইতি, ফিলিপাইন, পাকিস্তান ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ সপ্তম। গতবারও একই অবস্থানে ছিল। এবার বাংলাদেশের পরে রয়েছে থাইল্যান্ড, নেপাল ও ডোমিনিকান রিপাবলিক।

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে স্পেনে অবস্থান করছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মহসীন চৌধুরী। প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমরা যেসব উদ্যোগ নিচ্ছি, তার ফলাফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। গত দুই বছর প্রবল বন্যা ও প্রায় প্রতিবছর একটি করে ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত করছে। কিন্তু আগের তুলনায় আমাদের ক্ষয়ক্ষতি কম হচ্ছে। স্পেনের জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের এসব সফলতা আলোচিত হচ্ছে।’

২০১০ সাল থেকে জার্মানওয়াচ বিশ্বের সব কটি দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও ঝুঁকি নিয়ে ওই সূচকভিত্তিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্থিক ক্ষতি, জীবনের ক্ষতি ও দুর্যোগের আঘাতের মোট সংখ্যাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় এক নম্বরে ছিল। যে বছর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়, তার আগের ২০ বছরে ওই দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের আঘাত ও প্রভাব আমলে নেওয়া হয়।

প্রথম তিন বছর বাংলাদেশের নাম শীর্ষে থাকার অন্যতম কারণ ছিল ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়, ১৯৯৫ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা আমলে নেওয়া হয়। কিন্তু চলতি বছরের প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ১৯৯৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আঘাত হানা বড় দুর্যোগগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে। ওই তালিকায় ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার নাম এসেছে।

এ বছরের প্রতিবেদনে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে হাওর এলাকায় আগাম বন্যা এবং দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে আসা বন্যার কথা এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভারত থেকে শুরু করে নেপাল ও বাংলাদেশে ওই বন্যা বিস্তৃত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ১৬৮ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, যা দেশের জিডিপির শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি বছর বাংলাদেশে দুটি ঘূর্ণিঝড় ফণী ও বুলবুল এবং দুটি বন্যা আঘাত হেনেছে। কিন্তু ওই চারটি দুর্যোগ বাংলাদেশ অনেক সফলভাবে সামলাতে পেরেছে। এ ছাড়া আমাদের বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য নদীগুলোর দুই পাশে বাঁধ ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসগুলোর আঘাত সহ্য করার জন্য উপকূলীয় বেড়িবাঁধ রয়েছে। যদিও সেগুলোর অবস্থা ভালো নয়। তাই এই কয়েক বছর হয়তো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আসা দুর্যোগের ক্ষতি বাংলাদেশে কমেছে। কিন্তু এসব বাঁধ ঠিকমতো মেরামত করতে না পারলে আবারও বাংলাদেশ এক নম্বর ঝুঁকিতে থাকা দেশ হয়ে যেতে পারে।’