দুই নেতার দ্বন্দ্বে ধামরাইয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিত

দীর্ঘ ছয় বছর পর গতকাল বুধবার ঢাকার ধামরাই পৌর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সম্মেলন কেন্দ্র করে নানা রঙের বেলুন, ব্যানার-ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে সেজে উঠেছিল পুরো পৌর এলাকা। মঞ্চসহ সম্মেলনের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছিল। নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রের নির্দেশে সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।

সম্মেলন স্থগিত হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ এবং সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মালেক পরস্পরকে দোষারোপ করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের গত ২২ নভেম্বরের সভায় ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের দিন ধার্য করা হয়। ওই সভায় এম এ মালেক উপস্থিত থেকে সিদ্ধান্তপত্রে স্বাক্ষর করেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৭ নভেম্বর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩টি ইউনিয়নের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সম্মেলনে সাংসদ বেনজির আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকলেও এম এ মালেককে দেখা যায়নি।

গতকাল বুধবার ছিল পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এরপর বাকি তিনটি ইউনিয়নের সম্মেলন শেষে ৬ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নানা রঙের বেলুন, ব্যানার-ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে সেজে উঠেছিল পুরো পৌর এলাকা। ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছিল। মঞ্চসহ সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রের নির্দেশে পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনসহ তিনটি ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিত করা হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, সাবেক সাংসদ এম এ মালেকের স্ত্রী মিনা মালেকের এক মানহানির মামলায় ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির মোল্লা এবং পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কাউন্সিলর আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। জানতে পেরে ২৬ নভেম্বর তাঁরা আদালত থেকে জামিন নেন। এরপর ধামরাইয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন মোড় নেয়। ওই দিনই সভা করে এ এম মালেককে ধামরাইয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তাঁকে ধামরাইয়ে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন নেতা-কর্মীরা। এরপর এ এম মালেককে ধামরাইয়ে দেখা যায়নি। এমনকি তিনি কোনো ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও যাননি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এম এ মালেক সাংসদ থাকা অবস্থায় তাঁর স্ত্রী মিনা মালেক জমি দখলসহ যেসব দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন, সেসব অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল, যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিনা মালেক তাঁকেসহ (শাখাওয়াত) কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ওই মামলায় হয়রানির শিকার হওয়ায় দলের অনেক নেতা-কর্মী ক্ষোভে এম এ মালেককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এ অজুহাতে তিনি ইউনিয়ন সম্মেলনে উপস্থিত না থেকে সম্মেলন বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করেন। তাঁর ষড়যন্ত্রের কারণেই কেন্দ্র থেকে সম্মেলন স্থগিত করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি মুঠোফোনে সাংসদ বেনজীর আহমেদকে গতকালের পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনসহ তিনিটি ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।

এম এ মালেক বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ইউনিয়ন ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্বে থাকার কথা আমার। কিন্তু আমাকে ধামরাইয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে মারধরের হুমকি দিয়ে দূরে সরিয়ে রেখে আমার পরিবর্তে সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন জেলা কমিটির সভাপতি বেনজির আহমেদ। এভাবে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ও অগঠনতান্ত্রিকভাবে ১৩টি ইউনিয়নের সম্মেলন সম্পন্ন করা হয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রকে অবহিত করার পর কেন্দ্র থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

বেনজির আহমেদ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ হিসেবে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে আমি ওই সব সম্মেলনে উপস্থিত থেকেছি। কিন্তু কোনো প্রভাব বিস্তার করিনি।’