প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে বিএসএমএমইউকে ভয় দেখিয়েছেন: ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল বলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। সরকারের হস্তক্ষেপেই আদালতে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি।

আজ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার মেডিকেল প্রতিবেদন দাখিল ও জামিনবিষয়ক শুনানির দিন ধার্যের আদেশ দেওয়ার পর রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। আজ প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও বিএসএমএমইউ সময় চাওয়ায় ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত। পরদিন ১২ ডিসেম্বর সে বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এ আদেশ আসার পরে বিএনপির নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গতকাল বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে ‘রাজার হালে’ আছেন। তাঁর জন্য কারাগারে ‘মেইড সার্ভেন্ট’ দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামির সেবায় ‘কাজের বুয়া’ দেওয়ার দৃষ্টান্ত নেই।

প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে বিচার চলাকালে একটা মামলায় তিনি সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। তাঁর বক্তব্যে প্রমাণ হয়ে যায়, তিনি ও তাঁর সরকার চান না খালেদা জিয়া মুক্ত হোন। খালেদা জিয়ার মুক্তি করুণার ব্যাপার নয়, এটা তাঁর আইনগত অধিকার। তিনি আরও বলেন, ‘এসব কথা বলেই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) একদিকে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের যাঁরা রিপোর্ট দেবেন, তাঁদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর প্রধান অস্ত্র হচ্ছে ভয় দেখানো। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে তিনি যে বক্তব্য দিচ্ছেন, তা সরাসরিভাবে বিচার বিভাগের ওপরে হস্তক্ষেপের শামিল, আদালত অবমাননার শামিল এবং কিছুটা রায়ের মতোই।’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার ঘটনা টেনে বিএনপি মহাসচিব পরিস্থিতিকে বিচার বিভাগের জন্য ও চিকিৎসকদের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন।

আজ জামিনবিষয়ক শুনানি না হওয়ায় মির্জা ফখরুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপিল বিভাগের এই সিদ্ধান্ত জাতি শুধু হতাশই হয়নি, বিক্ষুব্ধ হয়েছে। তাঁরা উদ্বিগ্ন-বিক্ষুব্ধ জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর মুক্তি প্রয়োজন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন, গত রাতেই প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে আজকে তাঁর জামিনকে বাধা দেওয়া হয়।

খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে কী পদক্ষেপ হবে, সে প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তি না দিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবে।

সংবাদ সম্মেলন আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।