জাবি উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে ফের আন্দোলন, অভিযোগের তদন্ত চান শিক্ষার্থীরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এক মাস পর আজ বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাস খুলেছে। বেলা সোয়া একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে মিছিল শুরু করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের কয়েকটি সড়ক ও প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে বটতলায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘গত ৫ নভেম্বর উপাচার্যের মদদে ছাত্রলীগ আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনে নির্মম হামলা চালিয়েছিল। এই উপাচার্যের দুর্নীতির খতিয়ান দীর্ঘ হচ্ছে। বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও আমরা তা দেখতে চাই। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে এই উপাচার্যকে অপসারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে কালিমামুক্ত করতে চাই।’


জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুশফিক-উস-সালেহীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সচল করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি বিজয় অর্জন করেছেন। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে উপাচার্য আমাদের ওপর ঠিক এক মাস আগে হামলা চালিয়েছিল। আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাব। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা যদি আবার ঘটে, তাহলে জাহাঙ্গীরনগর আবার অস্থির হবে।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান। সমাবেশ শেষে ১০ ডিসেম্বর উপাচার্যের দুর্নীতির খতিয়ান প্রকাশ করা হবে বলে ঘোষণা দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক অধ্যাপক রাইহান রাইন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে প্রায় দুই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এই দাবিতে গত ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের পিটিয়ে সরিয়ে দেন। সেদিনই জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন উপাচার্য। এরপর গত মঙ্গলবার আবার জরুরি সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয় সচল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আজ সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। আর রোববার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি বশির আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে ফিরতে শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় প্রতিটি হলে সিসি টিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ স্বাভাবিক থাকবে।’

দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চান শিক্ষার্থীরা
আবাসিক হল খুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সচল করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তও চান তাঁরা।

ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য দুর্নীতি করেছেন, নাকি তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সে বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। কিন্তু সেটি স্পষ্ট হওয়া খুব জরুরি। যদি সত্যিই দুর্নীতি হয়ে থাকেন, তাহলে একা উপাচার্যের পক্ষে এত বড় দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। তাঁর সঙ্গে অন্যদেরও জড়িত থাকার সম্ভাবনা আছে। সেসব বের করা উচিত।’

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু নাহিয়ান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পক্ষ বলছে দুর্নীতি হয়েছে, আরেক পক্ষ বলছে দুর্নীতি হয়নি। এ রকম পাল্টাপাল্টি অবস্থানে আমরা আছি ধোঁয়াশায়। একই সঙ্গে এ রকম কাদা ছোড়াছুড়ির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষা ও প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। এতে স্পষ্ট হবে আসলেই দুর্নীতি হয়েছে, নাকি কেউ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অভিযোগ তুলেছে।’