মেঘনায় দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় মেঘনা নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর ডুবুরি দল।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় মেঘনা নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর ডুবুরি দল।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের চরকিশোরগঞ্জ এলাকায় মেঘনা নদীতে দুটি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আটজন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী নিখোঁজ আছেন—এমন কথা বললেও আজ শনিবার সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত কেউ নিখোঁজ থাকার দাবি নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেননি। তারপরও কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর ডুবুরি দল নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির নাম মো. হুমায়ুন (৩৫)। তিনি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর গ্রামের আবদুল হাইয়ের ছেলে।

সদরঘাট নৌথানার পরিদর্শক রেজাউল করিম বলেন, গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার সদরঘাট টার্মিনালের লালকুঠির ঘাট থেকে চরভৈরবীর উদ্দেশে ছেড়ে যায় বোগদাদিয়া-১৩ লঞ্চটি। অন্যদিকে, শরীয়তপুরের ওয়াপদা থেকে ঢাকার পথে আসছিল মানিক-৪। দিবাগত রাত একটার দিকে সোনারগাঁ উপজেলার চরকিশোরগঞ্জের কাছে মেঘনা নদীতে দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। নিহত মো. হুমায়ুনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় আহত নয়জনকে হাসপাতালে আনা হয়। সাতজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। আহত রোজিনা বেগম (৩০) ও সোনা মিয়া (৪৬) নামের দুজনকে জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে। রোজিনার দুই পায়ে জখম হয়েছে। সোনা মিয়ার দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

নিহত ব্যক্তির চাচাতো ভাই মো. রিয়াজ বলেন, হুমায়ুন ঢাকার উত্তরা এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি চালাতেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার শরীয়তপুরের বাড়িতে যান। পরের দিন শুক্রবার শরীয়তপুরের সুরেশ্বর ঘাট থেকে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে এমভি মানিক-৪ লঞ্চে ওঠেন।

মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে নিহত মো. হুমায়ুন
মেঘনা নদীতে দুই লঞ্চের সংঘর্ষে নিহত মো. হুমায়ুন

এমভি মানিক-৪ লঞ্চের যাত্রীরা বলেন, মূলত ঘন কুয়াশার জন্য দুটি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় অধিকাংশ যাত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। সংঘর্ষের পর যাত্রীরা ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। এ সময় ধাক্কাধাক্কি ও পদতলে পড়ে কমপক্ষে সাতজন আহত হয়েছেন। হুমায়ুন লঞ্চের চাপা লেগে মারা যান। লঞ্চটি যদি উল্টে যেত, তাহলে সবাই পানিতে ডুবে মারা যেতেন।

সকাল আটটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, লঞ্চের কোনো যাত্রী নিখোঁজ আছেন—এমন দাবি নিয়ে কারও স্বজন ঘটনাস্থলে আসেননি। উদ্ধারকাজসহ সার্বিক বিষয়ে তদারকি করছেন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুর রহমান খান। তিনি বলেন, সকাল থেকে তাঁরা নদীতে আছেন। এখন পর্যন্ত কেউ নিখোঁজ রয়েছেন, এমন দাবি নিয়ে ঘটনাস্থলে কেউ আসেননি। তারপরও কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর ডুবুরি দল নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছে।

অন্যদিকে, দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক আরিফ উদ্দিন বলেন, এ কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, বোগদাদিয়া-১৩ ও এমভি মানিক-৪ লঞ্চ দুটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।