নড়াইলে গাছতলায় ক্লাস

লোহাগড়ার ঘাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গাছতলায় পাঠদান করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
লোহাগড়ার ঘাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গাছতলায় পাঠদান করা হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, তাই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। চার মাস ধরে ক্লাস হচ্ছে বিদ্যালয় চত্বরের গাছতলায়। শিক্ষকদের বসার জায়গা নেই। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি, ভবন দ্রুত পুনর্নির্মাণ করতে হবে, না হলে এভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো মুশকিল হয়ে প‍ড়বে, বিশেষ করে আসছে শীতের মৌসুমে।

এ অবস্থা নড়াইলের লোহাগড়ার কোটাকোল ইউনিয়নের ৭৬ নম্বর ঘাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ১৯৩৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ে চার কক্ষের একটি ভবন নির্মিত হয় ১৯৯৮ সালে। চার মাস আগে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এরপর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা ভবন ছেড়ে দিতে বলেন। এক বছর আগে দুই কক্ষের একটি টিনের ঘর তৈরি করা হয়। সেই ঘরে দুটি ক্লাস নেওয়া যায়। অন্য দুটি ক্লাস চার মাস ধরে গাছতলায় নেওয়া হচ্ছে।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় চত্বরের এক পাশে অল্প কয়েকটি গাছ। পুরোপুরি ছায়া হয় না ওই গাছতলায়। সেখানে চট বিছিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ওই চত্বরে আর কোথাও ছায়া নেই। শিক্ষককেও চটে বসে পাঠদান করতে হয়। ধুলাবালু উড়ছে। রোদে পুড়তে হয়। মাঝেমধ্যে গাছের পাতা ও ছোট ডাল পড়ে। টিনের ঘরটিতে দুটি কক্ষ। ওপরে সিলিং নেই। তাই গরমে অতিষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জানালার পাল্লা না থাকায় ধুলাবালু ঘরে ঢুকছে। ঘরের মেঝে বালুময়। পাশেই মধুমতী নদী। নদীর ভাঙন প্রতিরোধের কাজ চলছে। তার বালু ও পাথরে বোঝাই করা বিদ্যালয় চত্বর। সে বালু উড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাকাল অবস্থা। ব্লক বানাতে যন্ত্রে কাজ চলছে বিকট শব্দে।

শিক্ষকেরা বলেন, মাঠে চেয়ার-টেবিল বা বেঞ্চ বসানোর সুযোগ নেই। তাই নিচে বসেই শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসরিন পারভীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে প্রথম পালায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রাক্‌-প্রাথমিক (শিশু), প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস হয়। দ্বিতীয় পালায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হয়। টিনের ঘরে নেওয়া যায় দুটি ক্লাস। প্রথম পালায় দুটি ও দ্বিতীয় পালায় একটি ক্লাস নিতে হয় গাছতলায়। বৃষ্টি হলে গাছতলার শিক্ষার্থীরা দৌড়ে টিনের ঘরে ওঠে। সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসে না। এ অবস্থায় খোলা জায়গায় এ পরিবেশে শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করা যায় না। শিশু শ্রেণির জন্য আলাদা সজ্জিত শ্রেণিকক্ষ রাখার নির্দেশনা থাকলেও কক্ষের অভাবে সেটি করা যায়নি। খোলা জায়গায় বসে শিক্ষার্থীরা টিফিন খায়। পরীক্ষার সময় হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি হলে পরীক্ষা নিতে সমস্যা হয়। গরমে শিশুশিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। খোলা পরিবেশে পাঠদান ও পরীক্ষায় মনোযোগ নষ্ট হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক ধারণাও জন্ম নিচ্ছে। ভবন না হলে বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ আসবে না। এতে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে।

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতি বলে, ‘মাঝেমধ্যে ধুলাবালুতে চোখ-মুখ ভরে যায়, বাতাসে বই–খাতা উড়ে যায়। ভয়ে থাকি, গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়ে কি না, আবার ঝড় ও বজ্রপাতের ভয় হয়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক নাসরিন পারভীন বলেন, এ পরিবেশে রোদ, বৃষ্টি ও ধুলাবালুতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুজ্জামান খান বলেন, নদীভাঙন এলাকা হওয়ায় সেখানে ভবন বরাদ্দ হওয়া কঠিন। নদীভাঙন এলাকার জন্য  টিনশেড ঘরের ব্যবস্থা আছে। সেটির জন্য প্রকল্প পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।