পার্বত্যাঞ্চলে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন সংগঠন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ’–এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন সংগঠন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ’–এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। নতুন সংগঠনের নাম ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ’। এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশের পর পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের চারটি সংগঠন বিলুপ্ত করা হয়েছে।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নতুন সংগঠনের নাম ঘোষণা করা হয়। এতে নতুন ও বিলুপ্ত সংগঠনগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তি সংযোজন–বিয়োজনের দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের স্বার্থ রক্ষায় এই সংগঠন গঠন করা হয়েছে বলে জানান সংগঠকেরা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু তাহের। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়া।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ৮০–এর দশক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম এক বিভীষিকাময় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ভেঙে একের পর এক চারটি আঞ্চলিক সংগঠনের জন্ম হয়েছে। আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলো জ্বালা–পোড়াও এবং মানুষ খুন অব্যাহত রেখেছে। চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এসব কারণে চুক্তির প্রত্যাশিত সুফল পাচ্ছে না পার্বত্য এলাকার মানুষ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতি কারও অজানা নয়। প্রতিনিয়ত সবুজ পাহাড়ে রক্ত ঝরছে। চাঁদাবাজির কারণে পাহাড়ের ব্যবসা–বাণিজ্য, পর্যটনশিল্প ও কৃষি খাত স্থবির হয়ে পড়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে সহিংসতা ও সংঘাত তৈরির অশুভ চেষ্টা চলছে। এসব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য নতুন সংগঠন করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই শুধু বাঙালিদের সংগঠন নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বসবাসরত পাহাড়ি–বাঙালি সবার জন্য দ্বার উন্মুক্ত থাকবে।

লিখিত বক্তব্য শেষে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য অধিকার ফোরাম বিলুপ্ত ঘোষণা করেন সংগঠনের নেতারা। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন নতুন সংগঠনের নেতারা।

পাহাড়ি–বাঙালির ঐক্যের সংগঠনের কথা বলা হলেও মঞ্চে পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মঞ্চে থাকা বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মজিবুর রহমান বলেন, পাহাড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করলে তখন সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি রাখা হবে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

নতুন সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সংগঠক অংগ্য মারমা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে পাহাড়ের মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পার্বত্য এলাকায় একধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা রয়েছে। পাহাড়ে উসকানি তৈরি করতে এবং পাহাড়ি জনগণের বিপরীতে দাঁড় করানোর জন্য এই ধরনের সংগঠন তৈরি করা হচ্ছে। আর পাহাড়ের মানুষের রাজনৈতিক ও অধিকারের আন্দোলনসহ পার্বত্য এলাকার মূল সমস্যাকে আড়াল করার জন্য চাঁদাবাজির বিষয়টি উপস্থাপন করা হচ্ছে।