বললেন আত্মীয় না রাখতে, আর ঘোষণা করলেন আত্মীয়ে ভরা কমিটি

কমিটি ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নব নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ। ছবি: সংগৃহীত
কমিটি ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নব নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ। ছবি: সংগৃহীত

গত শুক্রবার ছিল ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক কমিটিতে আত্মীয়তা-স্বজনপ্রীতি রোখার নির্দেশনা দিয়ে বক্তব্য দেন। বক্তব্যের ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই তিনি ২৪ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটির সদস্যদের মধ্যে আটজনই নিকটাত্মীয়। তাঁরা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী, বাবা-ছেলে, সম্বন্ধী-ভগ্নিপতি ও ভাই-ভাই।

গত শুক্রবার ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন উদ্বোধক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ছিলেন প্রধান অতিথি । জাহাঙ্গীর কবির নানক বক্তব্যে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের দলের কর্মীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারী ছেঁকে ছেঁকে দল থেকে বের করে দেওয়া ও কমিটি গঠনের সময় স্বজনপ্রীতি-আত্মীয়তা বর্জনের নির্দেশনা দেন।

সে সময় জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলের মধ্যে যদি কোনো অনুপ্রবেশকারী ঢুকে থাকে, তাহলে তাদের ছেঁকে ছেঁকে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের কমিটিতে কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি-আত্মীয়তা চলবে না। কমিটিতে শালা-সম্বন্ধী, মামা-ভাগনে, ভাগনি-শালী—এগুলো চলবে না।

এ বক্তব্যের ঘণ্টা খানেক পরই দ্বিতীয় অধিবেশনে জাহাঙ্গীর কবির নানক কাউকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি সভাপতি পদে মু. সাদেক কুরাইশী ও সাধারণ সম্পাদক পদে দীপক কুমার রায়ের নাম ঘোষণা করেন। এরপর কার্যকরী সদস্য পদে রমেশ চন্দ্র সেন, দবিরুল ইসলাম ও ইমদাদুল হকের নাম এবং সহসভাপতি পদে মাহবুবুর রহমান ওরফে খোকন, মাহবুবুর রহমান ওরফে বাবলু, শেখর কুমার রায়, সেলিনা জাহান, তোজাম্মেল হক, প্রবীর কুমার রায়, আখতারুল ইসলাম, এস এম মঈন ও ফজলুল হক জনের নাম ঘোষণা করেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আসম গোলাম ফারুক, মোস্তাক আলম ও মো. মনিরুজ্জামান। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন জুলফিকার আলী, মাজহারুল ইসলাম, সন্তোষ আগরওয়ালা। মহিলা সম্পাদক পদে আয়শা সিদ্দিকা, প্রচার মোস্তাফিজুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক পদে মো. নাসিরুল ইসলাম ও অর্থবিষয়ক পদে বেলাল হোসেনের নাম ঘোষণা করেন।

ঘোষিত এ কমিটি সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় ও সহসভাপতি শেখর কুমার রায় দুই ভাই। সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান ওরফে খোকন ও মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা আয়েশা সিদ্দিকা স্বামী-স্ত্রী। আসম গোলাম ফারুক ও মোস্তাক আলম সম্বন্ধী-ভগ্নিপতি এবং দবিরুল ইসলাম ও মাজহারুল ইসলাম সম্পর্কে বাবা-ছেলে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যে সব সময় দলের কমিটি গঠনের সময় স্বজনপ্রীতি ও আত্মীয়তা বর্জনের কথা বলে এলেও আমরা মানছি না। কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যন্ত বক্তব্যে ভালো ভালো কথা বললেও কাজের সময় সেটা ভুলে যান। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার সময়ও এমনটি হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলা সম্মেলন সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। কমিটিতে যাঁরা স্থান পেয়েছেন, তাঁরা অনেকেই নিকটাত্মীয় হলেও সবাই দলে সক্রিয়। একটি পক্ষ দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এসব অভিযোগ করে যাচ্ছে।

এবার সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু জাফর শামসুদ্দিন। কিন্তু দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রার্থীর প্রস্তাব না চেয়ে সরাসরি কমিটি ঘোষণা করায় তিনি আর প্রার্থী হতে পারেননি। এ বিষয়ে আবু জাফর বলেন, এটা কোনো সম্মেলনই হয়নি। সম্মেলনের নামে প্রহসন হয়েছে। কাউকে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটা রমেশ চন্দ্র সেনের মনগড়া কমিটি হয়েছে। তিনি (রমেশ চন্দ্র সেন) টাকার বিনিময়ে রাজাকারের পরিবার ও ফ্রিডম পার্টির নেতাদের কমিটিতে জায়গা করে দিয়েছেন।

আবু জাফর আরও অভিযোগ করেন, ভাই-ভাই, বাবা-ছেলে একই কমিটিতে আসতে পারবেন না—এটা গঠনতন্ত্রে নেই। এটা নেতাদের মনগড়া। মনগড়া হলেও সবার ক্ষেত্রে সমান হতে হবে। বালিয়াডাঙ্গীতে দুই ভাই কমিটিতে এসেছেন বলে সেটা বাতিল করা হবে। আর জেলা কমিটিতে ভাই-ভাই, স্বামী-স্ত্রীসহ নানা সম্পর্কের লোক বসাবেন—এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা অনৈতিক।