বগুড়া জেলা আ.লীগের নেতৃত্বে মজিবর-রাগেবুল

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি মজিবর রহমান মজনু এবং সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি মজিবর রহমান মজনু এবং সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে মজিবর রহমানকে সভাপতি এবং রাগেবুল আহসানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে।

আজ শনিবার বগুড়ার ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সোয়া তিনটার দিকে কাউন্সিল অধিবেশন পর্বে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের তিন বছরের কমিটির ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সম্মেলনের উদ্বোধক মোহাম্মদ নাসিম।

সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া মজিবর রহমান জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত হলেন। তিনি বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। অন্যদিকে, রাগেবুল আহসান বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

মোহাম্মদ নাসিম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও টি জামান নিকেতাকে সহসভাপতি; মঞ্জুরুল আলম, সাগর কুমার রায়, এ কে এম আসাদুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক এবং মাসুদুর রহমান মিলনকে অর্থ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এর মধ্যে মাসুদুর রহমান প্রয়াত নেতা মমতাজ উদ্দিনের ছেলে এবং বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি।

কমিটি ঘোষণার আগে সম্মেলনের প্রধান অতিথি এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বগুড়া আওয়ামী লীগে আগামী দিনের নেতৃত্ব চূড়ান্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে বগুড়া আওয়ামী লীগের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে। মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্য চলাকালেই নেত্রী বগুড়া আওয়ামী লীগের কমিটি সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা শুধু তাঁর সিদ্ধান্ত আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি।’

নানক আরও বলেন, সাংগঠনিকভাবে বগুড়া আওয়ামী লীগের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের জায়গা। শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একা দল চালাতে পারবেন না; দলের জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের রাজপুত্র তারেক জিয়া এই বগুড়াকে একসময় সন্ত্রাসের শহর বানিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসার পর বগুড়া এখন শান্তির শহর।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মকবুল হোসেন আজকের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলন উদ্বোধন করে মোহাম্মদ নাসিম নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ইতিহাসের একজন খলনায়ক। মোস্তাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাচক্রান্তের নেপথ্যের খলনায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই খলনায়করে চক্রান্তের জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

মোহাম্মদ নাসিম বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, বিশৃঙ্খলা করে কোনো লাভ হবে না। ২০১৪ সালে নির্বাচনী ট্রেন মিস করে আফসোস করেছেন। ২০১৮ সালে নির্বাচনী ট্রেন ধরতে পারলেও জনগণ বয়কট করায় শোচনীয়ভাবে হেরেছেন। এখন খেলতে চাইলে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। খেলা হবে এই বগুড়ার সাত আসনেও। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভালো খেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সাংসদ মান্নান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুল ইসলাম ও মেরিনা জাহান এবং বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাংসদ হাবিবর রহমান।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার পর এক পদপ্রার্থীর সমর্থকেরা চেয়ার ভাঙচুর করে। ছবি: সোয়েল রানা
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার পর এক পদপ্রার্থীর সমর্থকেরা চেয়ার ভাঙচুর করে। ছবি: সোয়েল রানা

আজ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পরপরই প্যান্ডেলের মাঝামাঝি অংশে কাঙ্ক্ষিত সাধারণ সম্পাদক পদবঞ্চিত একজন নেতার সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে হইচই–হট্টগোল শুরু করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ কর্মী–সমর্থকেরা এলোপাতাড়ি চেয়ার তুলে আছড়ে ফেলতে থাকেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক কেন্দ্রীয় নেতাদের মঞ্চ থেকে নিরাপদে সম্মেলনস্থল ত্যাগ করতে সহায়তা করে।

নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার পর আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে প্যান্ডেলে বেশ কিছু ভাঙা চেয়ার পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

জানতে চাইলে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নবঘোষিত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এ কে এম আসাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী একজন নেতার কর্মী-সমর্থকেরা কমিটি ঘোষণার পরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে হট্টগোল করেন এবং বেশ কিছু চেয়ার ছুড়ে ভেঙে ফেলেন।

আর সম্মেলনের সঞ্চালক ও বিলুপ্ত কমিটির দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান বলেছেন, সম্মেলনে কমিটি ঘোষণার পরপরই একজন নেতার কতিপয় কর্মী-সমর্থক হট্টগোল-হাঙ্গামা করে বেশ কিছু চেয়ার ছুড়েছেন। এতে অনেক চেয়ার ভেঙেছে। তবে ভাঙা চেয়ারের সংখ্যা কত, সেটা ডেকোরেটর মালিকের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ মিছিল-স্লোগানে মুখরিত ছিল। ওয়ার্ড-ইউনিয়ন, জেলা-উপজেলা থেকে দলে দলে নেতা-কর্মীরা মিছিল-সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়।