'আমার কর্মীর গায়ে আঁচড় দিয়ে শান্তিতে ঘুমানো যাবে না'

শামীম ওসমান। ফাইল ছবি
শামীম ওসমান। ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, ‘আমি বেঁচে থাকতে আমার কর্মীর গায়ে কাউকে আঁচড় দিতে দেব না। কেউ যদি আমার কর্মীর গায়ে আঁচড় দেয়, এই নারায়ণগঞ্জের মাটিতে এক ঘণ্টাও সে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না।’

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকায় আজ শনিবার দুপুরে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় শামীম ওসমান এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে সেই অস্ত্রধারী নিয়াজুলকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র আইভীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করার ইঙ্গিতও দেন তিনি।

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর হামলা হয়। ওই ঘটনার প্রায় ২২ মাস পর আদালতের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ নিয়াজুলসহ নয়জনের নামে মামলা নথিবদ্ধ করে। মামলার আসামি অস্ত্রধারী নিয়াজুল, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজামসহ অপর আসামিরা সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

আদালতের নির্দেশে মামলা দায়েরের পর দুই দিন পার হলেও পুলিশ অভিযুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

এদিকে শামীম ওসমানের এ বক্তব্যে আবারও নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় সুশীল সমাজের অনেকেই। তাঁরা মনে করেন, প্রশাসনকে চাপে রাখতেই শামীম ওসমান এই বক্তব্য দিয়েছেন। প্রশাসনের উচিত ওই ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের আইনের আওতায় আনা।

আদালতের নির্দেশে মামলা নথিবদ্ধ হওয়ার দুই দিন পর আজ শনিবার আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন শামীম ওসমান। সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, ‘অনেক ধৈর্য ধরেছি, অনেক চুপ থেকেছি, আর নয়।’ তাঁর বক্তব্য হালকাভাবে না নেওয়ার কথা মনে করিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বেঁচে থাকতে আমার কর্মীরা গায়ে কাউকে একটা আঁচড় দিতে দেব না। আমি বেঁচে থাকতে যদি কেউ আমার কর্মীর গায়ে আঁচড় দেয়, আর যদি মনে করে নারায়ণগঞ্জ শান্ত থাকবে, তাহলে আপনি বোকার রাজ্যে বাস করছেন। আমার জীবন থাকতে আমার কর্মীর গায়ে আঁচড় দিয়ে এই নারায়ণগঞ্জের মাটিতে শান্তিতে এক ঘণ্টাও কেউ ঘুমাতে পারবেন না।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ এখন একটা চারণভূমি হয়ে গেছে। ওয়ান–ইলেভেন যারা এনেছিল, সেই তারা ঘন ঘন নারায়ণগঞ্জে আসছে। নারায়ণগঞ্জের বদনাম হয় র‌্যাবের কারণে, দুর্নীতিবাজ অফিসারদের কারণে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ কিন্তু বদনাম করে না। বাইরে থেকে এসে বদনাম করে দিয়ে যায়।’

নারায়ণগঞ্জের এই সাংসদ আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা–বুড়িগঙ্গার দিক দিয়ে যায়। এখানে খেলবেন না।’

খেলা দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘ধৈর্য ধরেন আপনারা। আর যদি ওই রকম খেলা শুরু হয়, তাহলে ফতুল্লার নেতা-কর্মীরা প্রস্তুত আছে। তখন এই নারায়ণগঞ্জের মাটি আর দেখা যাবে না। খালি মাথা আর মাথা দেখা যাবে। আমি জানি, সবাই প্রস্তুত আছে। ডাকলে সবাই আসবে।’

মামলা প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, ‘এই মামলায় আসামি করা হয়েছে আমাকে। আসামি করা হয়েছে পোড় খাওয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। এই মামলা হয়েছে একমাত্র ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে। ২২ মাস আগে মেয়রের সঙ্গে সংঘর্ষে হয়েছিল হকারদের। ওই দিনের ঘটনার সঙ্গে যুবলীগ, ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। সেদিন সেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল একসময়কার তুখোড় নেতা নিয়াজুল ইসলাম। তখন তার ওপর মেয়রের লোকজন হামলা করেছিল। আজকে সে মামলায় তাকেই করা হয়েছে প্রধান আসামি।’

প্রশাসনের উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, ‘তদন্ত করেন। যদি মনে করেন আমি সংসদ সদস্য, আমাকে ধরতে সমস্যা হবে, তাহলে এই মুহূর্তে কথা দিচ্ছি, সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেব। আর আমার কারণে যদি এই ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে মূল আসামি তো আমি।’ তাঁর দাবি, সেদিন তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন পার্টির সেক্রেটারির কথায়।

ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।