আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের হাজিরা দেওয়া ইতিবাচক: মাইকেল বেকার

আইনজীবী মাইকেল বেকার। ছবি: সংগৃহীত
আইনজীবী মাইকেল বেকার। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের হাজিরা দিতে যাওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন মাইকেল বেকার। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একজন অ্যাসোসিয়েট লিগ্যাল অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

প্রথম আলোর সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী মাইকেল বেকার। রোববার (৮ ডিসেম্বর) থেকে ধারাবাহিক তিন পর্বে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হবে প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে।

আইসিজের বিচারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন মাইকেল বেকার। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় এক প্রশ্নের জবাবে মাইকেল বেকার বলেছেন, গত নভেম্বরে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি দীর্ঘ ও জটিল হবে। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গাম্বিয়া অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের জন্য আবেদন করেছে। সেই পদক্ষেপগুলো জরুরি প্রকৃতির; মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান অবস্থা বজায় রাখার জন্য কোনো রাষ্ট্র অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের আদেশ চাইতে পারে। ডিসেম্বরের ১০-১২ তারিখে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যে শুনানি হবে, তার বিষয় হলো গাম্বিয়া যেসব অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের আবেদন করেছে, আদালত তার আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন কি না।

আইসিজেতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল হাজিরা দিতে যাচ্ছে। এই দলের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন অং সান সু চি। কিন্তু তিনি একজন অভিযুক্ত। অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থন করার এখতিয়ার সম্পর্কে মাইকেল বেকার বলেন, ‘এই মামলায় মিয়ানমার যে হাজিরা দিতে যাচ্ছে, এটা ইতিবাচক। কারণ, আমার মনে হয়, অনেকেই এই আশঙ্কায় আছেন যে মিয়ানমার শুনানিতে অংশ নেবে না। সেটা হলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। রাষ্ট্রগুলো যেহেতু এই ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে তাদের মধ্যকার পারস্পরিক বিরোধ নিষ্পত্তি করার এখতিয়ার আইসিজেকে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু সে রকম কোনো মামলার শুনানিতে কোনো সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের হাজির হতে অস্বীকৃতি জানানো উচিত নয়। অং সান সু চি যে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের অংশ হতে যাচ্ছেন, এটা উল্লেখযোগ্য এবং আগ্রহব্যঞ্জক খবর।’

গাম্বিয়ার করা মামলা প্রসঙ্গে মাইকেল বেকার জানান, মামলাটির বিষয় হলো মিয়ানমার নামের রাষ্ট্রটি স্বয়ং গণহত্যা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতাগুলো ভঙ্গ করেছে, কোনো ব্যক্তি করেনি। অবশ্য মানুষ নিয়েই রাষ্ট্র এবং কোনো রাষ্ট্র কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে কি না—এ প্রশ্নের সঙ্গে ওই রাষ্ট্রের নেতৃত্বের পদগুলোয় আসীন ব্যক্তিদের গৃহীত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের সম্পর্ক থাকে। এ মামলার ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিরা হলেন অং সান সু চি এবং সেনাবাহিনীর জেনারেলরা। সুতরাং তাঁরা এক অর্থে অভিযুক্ত, কিন্তু সেটা পরোক্ষ অর্থে। এই মামলায় তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে আসামি নন।

তবে এ পরিস্থিতিকে ‘একটু অস্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন বর্তমানে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন ট্রিনিটি কলেজে অ্যাডজাঙ্কড লেকচারার হিসেবে কর্মরত মাইকেল বেকার। তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যা হয়েছে, গাম্বিয়াসহ আরও অনেক রাষ্ট্র যেটাকে গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করছে, সেই অবস্থার জন্য অং সান সু চিকে অভিযুক্ত করা হবে। কারণ, তাঁর গৃহীত সিদ্ধান্তের ফলে সেই অবস্থা হয়েছে, অথবা তিনি সেই অবস্থা ঠেকাতে হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে সেটা ঘটেছে। কিন্তু সে জন্য হেগের আদালতে তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে না। তিনি সেখানে যাবেন মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে; সেই প্রতিনিধিদলে মিয়ানমারের পক্ষে মামলা লড়ার জন্য বিদেশ থেকে আনা কয়েকজন আন্তর্জাতিক আইনজীবীও থাকবেন। কিন্তু মামলাটা আইসিসিতে করা হলে সেখানে অং সান সু চিকে ব্যক্তিগতভাবে আসামি করার আশঙ্কা ছিল।

মাইকেল বেকারের এই সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বের বিস্তারিত প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত হবে রোববার। এর বাকি দুটি পর্ব ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে। এই সাক্ষাৎকারের পুরোটা পড়তে চোখ রাখুন প্রথম আলোয়।