গরু-মহিষ চুরি ঠেকাতে চলছে রাতভর পাহারা

কৃষিকাজের পাশাপাশি গরু-মহিষ পালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন সিলেটের বিয়ানীবাজারের আলীনগর ইউনিয়নের মানুষেরা। কিন্তু সম্প্রতি সেই সব গরু-মহিষ চুরি শুরু হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা। এই ইউনিয়নে গত ১৫ দিনের মধ্যে অন্তত ৩১টি গরু ও ৩টি মহিষ চুরির খবর পাওয়া গেছে। নিরুপায় হয়ে এক সপ্তাহ ধরে গ্রামে গ্রামে রাত জেগে পাহারা বসানো হয়েছে। তারপরও থামছে না চুরি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজারের আলীনগর ইউনিয়নে ২৭টি গ্রাম রয়েছে।

গ্রামগুলোর বাসিন্দারা কৃষিকাজের জন্য গরু-মহিষ পালন করেন। খেত-খামারের পাশাপাশি গরু-মহিষ তাঁদের অবলম্বন। গত মাসের শেষ দিক থেকে গত বুধবার পর্যন্ত গ্রামগুলো থেকে ৩১টি গরু ও ৩টি মহিষ চুরি যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেকেই সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা ঘটলেও জড়িতদের কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। চুরি ঠেকাতে তাই চলতি মাসের প্রথম থেকে আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গ্রামবাসী প্রতিটি গ্রামে রাত জেগে পাহারা শুরু করেছেন। এতে সহযোগিতা করছে বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য এবং গ্রাম পুলিশ। স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যুবক ও তরুণেরা পাহারায় অংশ নিচ্ছেন। রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত গ্রামে গ্রামে পাহারা দেওয়া হচ্ছে।

এরপরও ঠেকানো যাচ্ছে না গরু চুরি। পাহারার মধ্যেই গত বুধবার রাতে ইউনিয়নের পাতন গ্রামে রশিদ মিয়ার বাড়ি থেকে তিনটি গরু চুরি হয়েছে। এর আগে গত ১৫ দিনে চুরি হয়েছে উজানধাকী গ্রামের কলকু মিয়া আটটি গরু, উত্তরভাগ সেনোটিলা গ্রামের সামছুল মিয়ার ছয়টি গরু ও একই গ্রামের কমরু মিয়ার তিনটি গরু।

আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ বলেন, যাঁদের গরু-মহিষ চুরি হচ্ছে, তাঁরা কেউই থানায় যেতে ইচ্ছুক নন। সে জন্য প্রকৃত সংখ্যাও বোঝা যাচ্ছে না। তবে গত ১৫ দিনে ৩১টি গরু ও ৩টি মহিষ চুরির ঘটনা নিশ্চিত হওয়া গেছে। চুরি ঠেকাতে স্থানীয় কিছু তরুণকে নিয়ে রাত জেগে পাহারা শুরু করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদেরও এতে যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি বিয়ানীবাজার থানার পুলিশও সহযোগিতা করছে। তারপরও এসব ঠেকানো যাচ্ছে না। যাঁদের গরু চুরি হচ্ছে, তাঁরা সবাই গরিব। গরু-মহিষ পালন করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। চোর চক্র তাঁদের শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিচ্ছে।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, পাহারা চলার সময় দেখা গেছে, একটি চক্র ভারত থেকে সীমান্ত এলাকা হয়ে রাতে ট্রাক ও পিকআপে করে গরু আনা-নেওয়া করছে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা কানাইঘাটের সড়কের বাজারে বিয়ানীবাজারের আলীনগর ইউনিয়নের সড়ক দিয়ে এসব যানবাহন চলাচল করে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি চোরাচালানের এসব গরুর রসিদ দিয়ে থাকেন। যাতে সড়কে যানবাহনগুলো পুলিশ আটকালেও অবৈধভাবে নেওয়া রসিদের মাধ্যমে সেগুলো বৈধ দেখানো হয়। আবার স্থানীয় কিছু মাংস বিক্রেতার বিরুদ্ধে চোরাই গরু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।

চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ বলেন, ‘রাতে গরু গাড়িতে করে আনা-নেওয়া বন্ধ করা হলে চুরি অনেকটা কমে আসবে বলে ধারণা করছি। বিষয়টি আমরা পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেছি। সেই সঙ্গে মাংস বিক্রেতাদের পশু জবাইয়ে নজরদারি করা প্রয়োজন।’
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবনী শংকর কর প্রথম আলোকে বলেন, ‘চুরি ঠেকাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমরা টহল জোরদার করেছি। সেই সঙ্গে চেকপোস্টও বাড়ানো হচ্ছে। রাতে গরু আনা-নেওয়া বন্ধ করতে আমরা উদ্যোগ নেব।’