টাকা না পেয়ে ফুটন্ত পানি ঢেলে দিলেন স্ত্রীর গায়ে

স্বামী কাজ ছেড়ে বেকার। তাই সংসারের বোঝা নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন গৃহবধূ সোনিয়া আক্তার। ঋণ করে ও বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে বাড়ির সামনে চায়ের দোকান দিলেন। কিন্তু স্বামী প্রতিদিন দোকান থেকে টাকা নিতে শুরু করলেন। এ নিয়ে বাধল ঝগড়া। একপর্যায়ে দোকানের কেটলির ফুটন্ত পানি সোনিয়ার গায়ে ঢেলে দিলেন স্বামী আবুল হোসেন সরদার।

গত শুক্রবার রাতে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার টেংরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধ সোনিয়া (২২) বর্তমানে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় সোনিয়ার বাবা মোকলেছ সরদার আজ রোববার গোসাইরহাট থানায় মামলা করেছেন। মামলায় সোনিয়ার স্বামী আবুল হোসেন সরদার, শ্বশুর সালাম সরদার ও শাশুড়ি মিলন তারাকে আসামি করা হয়েছে।

গোসাইরহাট থানার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে গোসাইরহাটের টেংরা গ্রামের মোকলেছ সরদারের মেয়ে সোনিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের সালাম সরদারের ছেলে কাঠমিস্ত্রি আবুল হোসেন সরদারের বিয়ে হয়। এর কিছুদিন পর আবুল কাঠমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে দেন। অভাব-অনটনের সংসার চালাতে দিশেহারা হয়ে পড়েন সোনিয়া। স্বামীকে কাজ করার তাগিদ দিতেন। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে সোনিয়ার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। এভাবে কিছুদিন চলার পর কোনো উপায় না দেখে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এবং বাবার বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে বাড়ির সামনে একটি চায়ের দোকান দেন সোনিয়া। কিন্তু এই দোকান থেকে প্রতিদিন টাকা নিয়ে যেতেন আবুল। এ নিয়ে প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো।

সূত্রগুলো জানায়, গত শুক্রবার রাতে আবুল হোসেন দোকানে এসে তাঁর স্ত্রীর কাছে ২০০ টাকা চান। সোনিয়া টাকা দেবেন না বলে জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আবুল তাঁর স্ত্রীর গায়ে চায়ের কেটলির ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা সোনিয়াকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল শনিবার তাঁকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুমন কুমার পোদ্দার জানান, গরম পানিতে সোনিয়ার শরীরের ১০ শতাংশ ঝলসে গেছে। ১০ থেকে ১২ দিন চিকিৎসা নিলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।

হাসপাতালের বিছানায় সোনিয়া বলেন, ‘আমি তো বিয়ের পর থেকেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। আমাদের এক বছর বয়সী মেয়ে আছে। তার মুখের দিকে চেয়ে সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম। নিজেই আয় করার জন্য চায়ের দোকান খুলেছি। তারপরও সে আমাকে মেরে ফেলার জন্য শরীরে গরম পানি ঢেলে দিয়েছে। আমার দোকানটিও ভেঙে দিয়েছে।’

সোনিয়ার বাবা মোকলেছ সরদার বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। তারপরও মেয়ের সংসারের কথা চিন্তা করে দুই দফায় এক লাখ টাকা দিয়েছি। এভাবে আমার মেয়েকে গরম পানি ঢেলে দেবে ভাবতে পারিনি।’

গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, এ ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।